ঢাকা, বুধবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিজের টাকায় কেনা ‘বাংলার প্রগতি’ যুক্ত হচ্ছে বিএসসির বহরে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৪৩, অক্টোবর ২২, ২০২৫
নিজের টাকায় কেনা ‘বাংলার প্রগতি’ যুক্ত হচ্ছে বিএসসির বহরে

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নিজস্ব অর্থায়নে বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন জাহাজ ‘এমবি বাংলার প্রগতি’। ১৯৯ মিটার লম্বা, ৩৩ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজটি ৬৫ হাজার টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম।

জাহাজটির প্রধান ইঞ্জিন MAN-B&W (জার্মান লাইসেন্সের অধীনে নির্মিত, চীন সংযোজিত)। পাম্প স্পেনের এবং কম্প্রেসার নরওয়ের।

ইতিমধ্যে জাহাজটির ট্রায়াল রান হয়েছে চীনে। শিগগির জাহাজটি পণ্য বোঝাই করবে এবং লাল-সবুজের পতাকা ফেরি করবে বিশ্বের বন্দর থেকে বন্দরে। বহরে যুক্ত হতেই প্রতিদিন ২০ হাজার ডলারের ভাড়াও নিশ্চিত হয়েছে জাহাজটির।

বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (কার্গো সুপারভিশন এন্ড অপারেশন) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি জানান, লন্ডনে জাহাজটি কাগজে পত্রে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) বুঝে নিয়েছে। ডেলিভারি এবং গ্রহণের প্রটোকল উভয় পক্ষের দ্বারা যথাযথভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) চীনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এমভি বাংলার প্রগতি জাহাজটির আনুষ্ঠানিক ডেলিভারি চীনা জিংজিয়াং নানিয়াং শিপবিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড থেকে গ্রহণ করবে।

সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) নিজস্ব অর্থায়নে ৫৫ থেকে ৬৬ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতা সম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ সদয় অনুমোদনের প্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএসসি ও সরবরাহকারী/বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির মধ্যে সরবরাহ চুক্তি হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি জুন ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মেয়াদকালে বাস্তবায়নের জন্য এর ডিপিপি গত ৩ জুন অনুমোদিত হয় এবং ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।

চুক্তি মোতাবেক প্রতিটি জাহাজের মূল্য ৩৮ দশমিক ৩৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দুটি জাহাজের মোট সমন্বয়কৃত ও সুপারিশকৃত মূল্য ৭৬ দশমিক ৬৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। জাহাজগুলো কেনার ক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা প্রস্তাবে গৃহীত বিভিন্ন কারিগরি দিক যাচাই-বাছাই করা হয় এবং মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিনে জাহাজের নির্মাণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজের স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত এবং কারিগরি মূল্যায়নে ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির প্রতিনিধির বিশেষজ্ঞ সেবা নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তির পর জাহাজগুলোর নাম পরিবর্তন করে এমভি বাংলার প্রগতি (আগের নাম: XCL GEMINI) ও এমভি বাংলার নবযাত্রা ( আগের নাম: XCL LION) নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ্রিন শিপ কনসেপ্টে নির্মিত জাহাজগুলো নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধান জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থা (আইএমও) নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে, যা বৈশ্বিক কার্ব ন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজগুলোর প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। জ্বালানি খরচ কম ও অপারেশনাল দক্ষতা বাড়ায়, যা সরাসরি অর্থনৈতিক সাশ্রয়ে প্রভাব ফেলে। হাইড্রোডাইনামিক ড্র্যাগ কমিয়ে জাহাজের গতি বৃদ্ধি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে। বাতাসের বাধা কমিয়ে গতি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে, বিশেষত উচ্চগতিতে অপারেশনের সময় কার্যকর।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে চীন সরকারের ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় আর্থিক সহায়তায় তিনটি করে ছয়টি জাহাজ কিনেছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। প্রথমবারের মতো এবারই সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৯৩৫ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ কিনছে। এর মধ্যে ‘এমবি বাংলার প্রগতি’ বহরে যুক্ত হলো। ‘এমবি বাংলার নবযাত্রা’ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ দুইটি জাহাজ থেকে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা রয়েছে বিএসসির।

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।