চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক ও ছাত্রী লাঞ্ছনা, সাংবাদিক নির্যাতন, সংঘর্ষ ও ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে ২০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ১৮জনই কোনো না কোনোভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ২০ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের বিষয়টি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী। এসময় তিনি এসব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের কারণ তুলে ধরেন।
প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির এক সভায় ২০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এদের মধ্যে ১৮জনের বহিষ্কারাদেশ চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে এবং দুই জনের বহিষ্কারাদেশ ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। ’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান খান ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের একই শিক্ষাবর্ষের মোফাজ্জল হায়দার হোসাইনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে ৪ নভেম্বর তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাই এ দুজনের বহিষ্কারাদেশ ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
একই দিন সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার দায়ে ইতিহাস বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের দিদারুল ইসলাম ও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ইরফাতুল আলম পিটুকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষক লাঞ্ছনা ও বিভাগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ফলিত পদার্থবিদ্যা, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তৈয়্যবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি তার স্নাতক পরীক্ষার বিভিন্ন কোর্সের বিশেষ পরীক্ষা সমূহের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে।
ইংরেজি বিভাগে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসান মো. জলিল রুবেলকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট ও পহেলা সেপ্টেম্বর চবির মাস্টারদা সূর্যসেন হলে কক্ষে ভাংচুর ও পরবর্তীতে এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস’র ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের নিরুতপল সরকার, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান শাওনকে ৬ মাসের জন্য এবং একই ইনস্টিটিউটের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রানাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর সমাজতত্ত্ব বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. শিহাব উদ্দিনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
১০ নভেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সুব্রত কুমার মজুমদার, আবীর ইবনে রফিক, আব্দুল ওয়াহাব রাজীবকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় মো. রাফিউল্লাহকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া মার্কেটিং স্টাডিজ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের আজিজুল হাকিম ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. ইমরান হোসাইনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
চলতি বছরের ২ নভেম্বর রাতে সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র জতিষ্ক চাকমা ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ছাত্র রিংকু চাকমাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকায় ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম জাহেদুল আওয়ালকে সাময়িক বহিষ্কার এবং এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি এটিএন বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু সুফিয়ানকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইইআর) এর ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ। তাকে সাময়িক বহিষ্কার এবং এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
টিএইচ/আইএসএ/টিসি
** চবিতে ২০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার