ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রপ্তানি আয়ে সুখবর, অর্থনীতির চাপ সামলাতে বাড়ছে সুবিধা

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
রপ্তানি আয়ে সুখবর, অর্থনীতির চাপ সামলাতে বাড়ছে সুবিধা -ফাইল ছবি

ঢাকা: বাজারে ডলারের অস্থিরতার মধ্যেই রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্য অতিক্রম করেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের রপ্তানি আয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ডিসেম্বর শেষে বছরের ছয় মাসের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার মধ্যেই রপ্তানি আয়ের এই স্বস্তির খবর মিললো।

সোমবার (২ জানুয়ারি) অর্থবছরের প্রথমার্ধের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আগের দিন প্রবাসী আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।  

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭ দশমিক ৩১১ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয়ের এ চিত্র লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছ ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এ রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি আয়ের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেই মোট রপ্তানি আয়ে এর প্রভাব পড়ে। অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসেও তাই হয়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের ৪৬ দশমিক ৮০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। আর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি আয়ের এই চিত্র ‘আপাতত ভাল’ মনে করছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, যুদ্ধাবস্থার কারণে যে হারে কার্যাদেশ এসেছে রপ্তানি আয়ে তার প্রভাব পড়েনি।

বিষয়টিকে ইতিবাচক খবর বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তা নেতা শোভন ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বছরের বাকি মাসগুলোতে রপ্তানি আয় কমলেও খুব বেশি কম হবে না, তারই লক্ষণ এই রপ্তানি আয় চিত্র।

রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের এই চিত্র বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়-অস্থিরতা থেকে সৃষ্ট চাপ থেকে উত্তরণের চেষ্টা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, নিঃসন্দেহে ট্রাকে ফেরার প্রচেষ্টা। তবে যেসব ভুল সিদ্ধান্ত ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে এ সমস্যা হয়েছে, এটা তাড়াতাড়ি সমাধান হবে না। এখনো কমপক্ষে তিন-চার মাস সময় লাগবে। তবে এটা বলাই যায়, সংকট থেকে উত্তরণে এটা একটি প্রসেস।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ দশমিক ৪৯৩ বিলিয়ন ডলার। এই প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা কম হলেও বিদায়ী শেষ মাস ডিসেম্বর অনেকটা ট্রাকে ফেরার বার্তা রয়েছে।      

একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। যা নভেম্বরের চেয়ে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার বেশি। এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৭ কোটি ডলার বেশি। সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে ভালো রেমিট্যান্স আসে। বছরের প্রথম মাস জুলাই আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং আগস্টে আসে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৫২ কোটি ৬৯ ডলারে নামে। ডলারের এ ছন্দপতন অর্থনীতির অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় ডিসেম্বর মাসে ইতিবাচক ফল আসে।

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যকমের মধ্যেই যুদ্ধাবস্থা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা পরিস্থিতিকে সংকেটর দিকে ঠেলে দেয়। এ সময় কমতে থাকে প্রবাসী আয়ও। তবে, ডিসেম্বরের প্রবাসী আয় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে শোভন ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার তথ্য আমাদের বলে দেয়, চলতি বছরে রপ্তানি আয়ে খুব ভাল না হলেও লক্ষ্যের খুব দূরেও থাকবে না। কারণ হাতে থাকা কার্যাদেশে খুব একটা ভাল কিছু নেই, হয়তো চালিয়ে মতো আছে।

তবে রপ্তানি আয় বাড়ার ক্ষেত্রে ভাল খবর হলো ক্রেতারা চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশমুখি হতে পছন্দ করছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থা ও চীনে নতুন করে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় বাংলাদেশের এই সুবিধা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
জেডএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।