ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসামাল বাজারে দিশেহারা ক্রেতা, কাটছাঁটেও মেলে না হিসাব

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
বেসামাল বাজারে দিশেহারা ক্রেতা, কাটছাঁটেও মেলে না হিসাব

ঢাকা: রমজান শুরুর আগে থেকেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়েছে দফায় দফায়।

এরপরও রোজার প্রথম দিনই আরও এক দফা বেড়েছে নিত্যপ্যণের দাম। লাগামহীনভাবে দাম বাড়তে থাকায় দিশেহারা ক্রেতারা। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

ক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করতে রমজানের প্রথম দিন সব পণ্যের দাম আরেক দফায় বাড়িয়েছেন। বাজারে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই, যে যার মতো করে পণ্যের দাম হাঁকছেন। চাহিদামতো পণ্য কিনতে না পেরে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। কাট-ছাঁট করেও হিসাব মিলছে না বাজারের তালিকায়।

বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন শরিফুল ইসলাম। ছুটির ‍দিনে তালতলা বাজারে কেনাকাটা করতে এসে নিত্যপণ্যের দাম শুনে হিসাব মেলাতে পারছেন না। তিনি বলেন, শুক্রবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রথম রমজান। সব কিছুই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে।

তিনি বলেন, চারটি সোনালি মুরগি কিনব ভেবেছিলাম, সেই দামে দুটি কিনতে হয়েছে। ভালো কোনো মাছ খেতে চাইলে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার নিচে কেনা যায় না। রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি হলেও অনেক সময় গন্ধের কারণে নিই না। আর গরুর মাংস এক কেজি কিনলে এক বেলাতেই শেষ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বাজারে আসলে মাথা ঘুরাতে থাকে।

এদিকে রমজান এলে ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। সমাজে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত বাই ইফতারের মেন্যুতে কম বেশি সুস্বাদু ফল রাখতে চায়। তবে দামের কারণে এবার নিম্নবিত্ত পরিবারের ইফতারে ফল জুটবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

শেওড়াপাড়ায় ফল কিনতে আসা সাকেরা বেগম বলেন, ইফতারে নাশপাতি ও মাল্টা আমার ছেলের খুব পছন্দ। প্রতিবছর মেন্যুতে এই দুই ফল থাকে। এ বছর মাল্টা কিনে চলে যাচ্ছি। নাশপাতির যে দাম, তা কিনে পোষাবে না। তিনি বলেন, দাম একবার বেড়ে গেলে আর কমে না। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন বেতন বাড়ছে না। এভাবে চলব কীভাবে? 

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মাল্টা ২১০ থেকে ২৪০ টাকা, পেয়ারা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও পেঁপে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কলার ডজন মানভেদে ৮০ থেকে ১৮০ টাকা। আকারভেদে একেকটি আনারস ৩০-৫০ টাকা। তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৭০ টাকা কেজি দরে। মানভেদে বেলের হালি পড়ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

বিদেশি ফলের মধ্যে প্রতি কেজি সবুজ আপেল ৩২০ টাকা, লাল আপেল ৩০০ টাকা, রয়েল গালা ৩০০, ফুজি আপেল ২৬০, কমলা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, লাল আঙুর ৫৫০, সবুজ আঙুর ২৮০, কালো আঙুর ৩৮০ টাকা, নাশপাতি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রমজানে খেজুরের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে খেজুরের। গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। এলসি বন্ধ থাকার কারণে খেজুরের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে সুন্নাহ অরগানিক ফুডসের মো. রাসেল বলেন, সারা বছরের বিক্রির অর্ধেকই রোজার মাসে হয়। দাম বাড়লেও আমরা লাভ করতে পারছি না। এলসি বন্ধের কারণে খেজুরের দাম বাড়ছে। আগামীতে দাম আরও বাড়বে।

বাজারে মাবরুম খেজুর ৭০০ টাকা, চুকারি খেজুর ৭০০ টাকা, বরই খেজুর ৩০০ টাকা, ইরানি মরিয়ম খেজুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মেঘজুয়েল খেজুর ১২০০ টাকা, আজোয়া খেজুর মানভেদে ৯০০-১২০০ টাকা, কালমি মরিয়ম ৬০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজারে এই অস্থিরতার জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দুষছেন ভোক্তারা। রোজার আগে এত বৈঠক হলো, এত কিছু হলো। তারপরও ভোক্তারা বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না। এখনই নিত্যপণ্যের লাগাম টানা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে তারা মনে করেন।

তবে শুক্রবারও বাজার তদারকির অংশ হিসেবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালায়।

অভিযান শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা একটি টিম আজ কারওয়ান বাজার পর্যবেক্ষণে এসেছি। আমাদের আরও চারটি টিম রাজধানীর কাপ্তান বাজার, মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে দিনব্যাপী অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করবে। বাজারে যদি কোনো অনিয়ম দেখা যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে আমরা দায়বদ্ধতার মধ্যে আনব।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক আরও বলেন, ২০২৩ সাল হবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা ভোক্তা, ব্যবসায়ী, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করব। যারা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে, মজুতের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান হবে কঠোর। আমাদের ব্যবসায়ীরা অবশ্যই লাভ করবেন। দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব তারা দেন। রাজস্ব প্রদানের পাশাপাশি ভোক্তাদের প্রতি তাদের যে নৈতিক দায়িত্ব, ভোক্তার অধিকারের জায়গায় ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।