২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগাম সংকটের বার্তা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ও রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, যার বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির ওপর।
গতকাল রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বড় ধাক্কার মুখে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ৩.৩ শতাংশ। আইএমএফ ও এডিবি বলেছে, এ হার হতে পারে যথাক্রমে ৩.৮ ও ৩.৯ শতাংশ। ’
মাহবুবুর রহমান জানান, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, খাদ্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ। বিনিয়োগ হ্রাস ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শেষে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৪৫ ট্রিলিয়ন টাকা, যার বড় অংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। ১৯টি ব্যাংক জানিয়েছে ১.৭১ ট্রিলিয়ন টাকার মূলধন ঘাটতির কথা। এ কারণে সরকার ব্যাংক বোর্ড বাতিল, ব্যাংক একীভূতকরণসহ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে এই প্রেক্ষাপটে আইসিসিবি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, তৈরি পোশাক খাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাতে পারে বাংলাদেশ, যার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে ১১.৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, বাংলাদেশের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ
কাউন্সিলে মাহবুবুর রহমান বলেন, রেড সি সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন বৈশ্বিক অস্থিরতাকে আরও জটিল করে তুলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন কৌশলগত প্রস্তুতি।
জ্বালানি নিরাপত্তা: টাকার মান হ্রাস ও আমদানিনির্ভরতার কারণে ব্যয় বেড়েছে। সমাধানে নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানের পরামর্শ।
রাজস্ব ঘাটতি: জিডিপির তুলনায় কর আহরণ মাত্র ১০ শতাংশের নিচে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়।
জলবায়ু ও খাদ্য নিরাপত্তা: জলবায়ু পরিবর্তন থেকে সৃষ্ট বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা প্রবৃদ্ধি বছরে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৈচিত্র্য: ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামে তা ছিল ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আইটি খাতে জোর দেওয়ার সুপারিশ।
সাইবার নিরাপত্তা: ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই দ্রুত জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩৫% শুল্ক: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ও কর্মসংস্থানে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ।
বিবিআইএন করিডর সম্ভাবনা: ভুটান-ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ করিডর বাস্তবায়নে ২০৩৫ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের সম্মিলিত জিডিপি ৮.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এতে বাংলাদেশ কৌশলগত ট্রানজিট হাবে পরিণত হতে পারে।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন