পার্বতীপুর(দিনাজপুর): দেড় মাস ধরে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৭০০ খনি শ্রমিক সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়েছে।
প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইবমেন্ট(ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ) সময়মতো বিদেশ থেকে আমদানি না করায় যন্ত্রপাতির অভাবে খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের আগে পুনরায় পাথর উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে খনির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর আগে পুরাতন স্টোপে উত্তোলনযোগ্য পাথরের মজুদ কমে আসায় গত ১ আগস্ট থেকে প্রতিদিন তিন শিফটের জায়গায় দুটি শিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়নের জন্য উৎপাদন সহায়ক ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে আসছে উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। এসব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার প্রয়োজন।
কিন্তু খনি থেকে উৎপাদিত পাথর আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় একদিকে অর্থ সংকট, অন্যদিকে খনির তৎকালীন ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা ও কয়েকজন কর্মকর্তার অপতৎপরতায় জুলাই মাস পর্যন্ত মালামাল আমদানির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

সূত্র জানায়, অর্থ সংকট কাটাতে খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা আগস্ট মাসে মধ্যপাড়া খনিকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ (ঋণ হিসেবে) দেয়। এছাড়া মধ্যপাড়া খনির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) প্রকৌশলী আবুল বাসারকে সরিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডি আমিনুজ্জামানকে মধ্যপাড়া খনির এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন।
পেট্রোবাংলার ঋণ পেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম অবস্থায় অতি প্রয়োজনীয় ৩৪টি প্রোফর্মায় অন্তর্ভুক্ত শতাধিক আইটেমের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানির জন্য অগ্রণী ব্যাংক কাওরান বাজার, ঢাকা শাখায় এলসি(ঋণপত্র) খোলা হয়। এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। এলসি খোলার পরপরই জিটিসি এসব ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অর্ডার দেয়।
যন্ত্রপাতি আমদানির সঙ্গে জড়িত জার্মানিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও জিটিসি প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম কাজি বাংলানিউজকে জানান- উৎপাদনকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিয়ে দেশে এনে তা খনি ভূ-গর্ভে বসিয়ে উৎপাদনে যেতে আরও ৩-৪ মাস লাগতে পারে। এসময় পর্যন্ত খনির পাথর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি এনে উৎপাদন শুরু করা হবে। সে জন্য জিটিসিকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি এলেই পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন শুরু করা হবে।
২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে(জিটিসি)।
জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ (৯.২ মিলিয়ন টন) টন পাথর উত্তোলন করে দেবে। জিটিসি ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উৎপাদন শুরু করে।
উৎপাদন শুরুর ৬ মাসের মধ্যে খনিতে তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে আসছিল জিটিসি। খনি ইয়ার্ডে বর্তমানে বিভিন্ন সাইজের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন পাথর মজুদ রয়েছে। প্রতিমাসে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ টন পাথর।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
পিসি