ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জিপিএ-৫, পাসের হারে ছন্দপতন

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৩
জিপিএ-৫, পাসের হারে ছন্দপতন

ঢাকা: চলতি বছরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমেছে। গতবারে তুলনায় তো কমেছে, বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় জিপিএ-৫ পাওয়া এবং পাসের হারে ছন্দপতন ঘটেছে।

২০২৩ সালে এই পাবলিক পরীক্ষায় পাস করেছে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। এ বছর মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল ৯টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণী হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এরপর শিক্ষামন্ত্রী বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর সব শিক্ষা বোর্ডে উত্তীর্ণ ছাত্রের চেয়ে ৪৮ হাজার ৩৩২ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ছাত্রের চেয়ে ১৩ হাজার ৬৫০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ বছর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডর অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট ছাত্রের চেয়ে ৯০ হাজার ৩০৪ জন ছাত্রী বেশি উত্তীর্ণ হয়েছে। ছাত্রের তুলনায় ১৭ হাজার ২৭০ ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে।

নয়টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের এসএসসি, দাখিল, এএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) ফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতবছর মোট পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। আর এ বছর পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। গতবারের তুলনায় পাস ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে।

আর পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও ফলের ছন্দপতন ঘটেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। ২০১৯ সালের পাসের হার ৮২ দশমিক ২০, ২০২০ সালে ৮২ দশমিক ৮৭, ২০০১ সালে ৯৩ দশমিক ৯৮, ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৮৪ এবং ২০২৩ সালে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এবারের ফলাফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন, ২০২০ সালে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন, ২০২১ সালে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন, ২০২২ সালে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ এবং ২০২৩ সালে তা কমে হয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জনে।  

শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান
শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতবছর ছিল ৫০টি, এ বছর কমেছে দুইটি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকে। কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় তারা এমপিওভুক্ত না। গতবারের মতো এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে কর্মশালা করা হবে।

ফলাফলের মূল্যায়ন সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, আমরা ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখছি। তবে ঢাকা বোর্ডের ফলাফল গতানুগতিক বলে জানিয়েছেন তিনি। আর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান নিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আমরা কর্মশালা করব।

পরীক্ষা যেভাবে ছিল
গত ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা ২৮ মে মাসে শেষ হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কয়েকটি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। ২০২৩ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসে এবং পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষকদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসের আলোকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে।

পরীক্ষার্থীরা সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষকদের উত্তরপত্র নির্ভুল মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

পেপারলেস ফল
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিগত বছরসমূহের ন্যায় এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের সরাসরি মোবাইল ফোনে ফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্রমশ উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

দীপু মনি বলেন, এ ফলাফল অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক, শিক্ষকদের প্রযুক্তি নির্ভর পাঠদান, অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা ও সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

পরীক্ষায় কৃতকার্য সব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি আশা করব তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফল হবে।

সাধারণ তথ্য
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ নয় হাজার ৮০৩ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। মোট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র সাত লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন এবং ছাত্রী হয়েছে আট লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট পরীক্ষার্থীর গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ছাত্র ৭৮ দশমিক ৮৭ এবং ছাত্রী ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ৬১৪ জন। এ বছর মোট ২০ হাজার ৭১৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় দিয়েছে।

এসএসসি: দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯১৯ জন। এরমধ্যে ছাত্র সাত লাখ ৭৬ হাজার ৫১৯ জন এবং ছাত্রী আট লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ জন। এসএসসি পরীক্ষায় এবার মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ জন। এরমধ্যে ছাত্র ছয় লাখ ১৬ হাজার ৭১ জন এবং ছাত্রী সাত লাখ ছয় হাজার ৩৭৫ জন। এসএসসিতে পাসের হার ৮০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ছাত্র ৭৯ দশমিক ৩৪ এবং ছাত্রী ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এসএসসিতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ২২০ জন, এরমধ্যে ছাত্র ৭০ হাজার ৯৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮৮ হাজার ২৪৫ জন। পরিসংখ্যানে এসএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে।

দাখিল: মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ জন, এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৫ জন এবং ছাত্রী এক লাখ ৪৫ হাজার, ৪৩২ জন। দাখিল পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৯৬৪ জন, এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৯৫০ জন এবং ছাত্রী এক লাখ ১২ হাজার ১৪ জন। দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০, এর মধ্যে ছাত্র ৭২ দশমিক ২৯ এবং ছাত্রী ৭৭ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। দাখিলে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ২১৩ জন, এর মধ্যে ছাত্র তিন হাজার ১৮৮ জন এবং ছাত্রী তিন হাজার ২৫ জন। দাখিলের পরিসংখ্যানে পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।  

কারিগরি: এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় সর্বমোট অংশ নিয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৪৪৪ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৯৩ হাজার ৬২৯ জন এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৮১৫ জন। মোট উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৩০ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৭৯ হাজার ৩৮৩ জন এবং ছাত্রী ২৬ হাজার ৩৪৭ জন।

বিদেশে কেন্দ্রের তথ্য
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিদেশের কেন্দ্রে অংশ নিয়েছে মোট ৩৭৫ জন, এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩২০ জন। বিদেশের কেন্দ্রগুলোর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৩।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৩
এমআইএইচ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।