রাজশাহী: দেশের সকল সেক্টরে ক্ষমতায়ন এবং নিয়োগে ঢাবি ও ঢাকা কেন্দ্রিকতা বন্ধ এবং বিকেন্দ্রীকরণের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ বাংলাদেশের সকল স্টেকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, সংস্কার কমিশন, পিএসসি, ইউজিসিসহ রাষ্ট্রীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো পুনর্গঠন করে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আর তৃতীয় দাবি হচ্ছে- ডিসেন্ট্রালাইজ বাংলাদেশ গঠনে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে তারা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করলেন। তবে ইফতারের পর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বোহা চত্বরে সমাবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনে কথা জানান তারা।
এর আগে বুধবার (৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনবাজারসংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করেন তারা। রাবি শিক্ষার্থীরা জ্বোহা চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে স্টেশনবাজারে আসেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র-শিক্ষক এক হও, ঢাবি সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশ গড়ো’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ঢাবি ভক্তি’, ‘ঢাবিবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ মুক্তি পাক’, ‘সিন্ডিকেট না মুক্তি? মুক্তি মুক্তি, ঢাকা না বাংলাদেশ? বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ মুহূর্মুহূভাবে এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ বলেন, রাষ্ট্রের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে ঢাবি কেন্দ্রিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল দেখলাম অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমে রাবির ড. এম আমিনুল ইসলাম স্যারকে নিয়ে সংবাদ হলো। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই আবার দেখলাম সেই সংবাদ পরিবর্তন হয়ে গেছে। রাবির স্থলে ঢাবির এক স্যারকে নিয়োগ দেওয়ার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এই ঘটনা সত্যিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক। তাই এমন সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশে শিক্ষকদের দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, এই নতুন বাংলাদেশে আবার যদি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাংলাদেশের মানুষ আবার সেই ফ্যাসিস্ট আচরণকে সমূলে উৎপাটন করব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এমন একটি খবর ভেসে এসেছিল। তার কিছুক্ষণ পর আমরা জানতে পারি অন্য কেউ হচ্ছে শিক্ষা উপদেষ্টা। রাবি শিক্ষককে সরিয়ে ঢাবি থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ জুলাইয়ের আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসই ছিল ফ্যাসিবাদ নির্মূলের আঁতুড়ঘর কিন্তু জুলাইয়ের পর দেখছি প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আর কোনো ক্যাম্পাসে কী যোগ্য মানুষ নেই? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পিএসসি, ইউজিসিসহ
দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একমাত্র যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী? যা বৈষম্য ছাড়া কিছুই না! এভাবে দেশ চলতে পারে না। আমরা চাই অন্তর্বর্তী এই সরকার সকল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করুক। এখনই সময় এসেছে বিপ্লবের হিস্যা সকলকে বুঝিয়ে দেওয়ার।
এদিকে শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের কারণে আজ কোনো ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হয়নি বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মামুনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত রাজশাহী-ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন যথাসময়ে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তাই কোনো ট্রেন আটকে নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৫
এসএস/এসএএইচ