ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪
রাবিতে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মঙ্গলবার শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে।   ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আজকের এই দিনে ড. জোহা পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন।

সেই থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ জোহা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

রাবিতে দিনটিকে প্রতিবছর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবার ড. জোহার ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে সকাল থেকে প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থিত  ড. জোহার স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর রাবি অফিসার সমিতির কার্যালয়ে শুরু হয় আলোচনাসভা। এছাড়া সকাল ১০টায় সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতায় এবারের বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত করা হবে।

‘কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার গায়ে লাগবে। ’ আগের দিন এই অঙ্গীকার করে পরদিন ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা। ১৯৬৯ সালের এই দিনে গণঅভ্যুত্থানে ড. জোহা পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। সেই থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ জোহা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ড. শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের পাঁচ আগস্ট পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুর রশিদ বাকুড়ার কোর্টে চাকরি করতেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার ডাক নাম ছিল মন্টু।

মেধাবী জোহার শিক্ষাজীবন : বাঁকুড়া জেলা স্কুলে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন এবং ১৯৪৮ সালে এই স্কুল হতে তিনি প্রথম বিভাগে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালের পর ড. জোহার পরিবার স্থায়ীভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৫৩ সালে ড. জোহা দ্বিতীয় শ্রেণীতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

ভাষা সংগ্রামে ড. জোহা : ছাত্রজীবনে ড. জোহা বাম রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় মিছিলের সামনের সারিতে থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের ছাত্র শামসুজ্জোহা। ভাষা সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য জেলও খেটেছিলেন ড. জোহা।

ড. জোহার কর্মজীবন : ১৯৫৫ সালে ড. জোহা পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স কারখানায় সহকারী কারখানা পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল অর্ডানেন্স কারাখানায় বিষ্ফোরক দ্রব্যের উপর প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পান।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রভুসুলভ মনোভাবের প্রতিবাদে ১৯৬১ সালে তিনি অর্ডিন্যান্স কারখানার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন।

রাবিতে যোগদান : ১৯৬১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগ দেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। এখানে যোগ দেওয়ার পর তিনি ইংল্যান্ডের ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এআরসিএস ও বিএস ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল ড. জোহাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। ড. জোহা বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সঙ্গেও জাড়িত ছিলেন। দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে তার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।