জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসানের দায়ের করা রিট পিটিশনের ফলে বিপাকে পড়েছে একই বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের ৭৫ জন শিক্ষার্থী।
রিট আবেদনের ফলে ঐ ব্যাচের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফলাফল প্রকাশে বিলম্বিত হলে তাদের শিক্ষা জীবন আরো দীর্ঘ হবে।
এদিকে রিট প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার ঐ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভাগে তালা ঝুলিয়ে অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসানকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসানকে ৩৭তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কমিটির সিনিয়র সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম।
কিন্তু ১১ মাসে মনজুরুল হাসান পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম চালু না করায় ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিভাগের একাডেমিক সভায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতির পদ থেকে মনজুরুল হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন কমিটির সভাপতি হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলামকে অনুমোদন দেন।
মোঃ নুরুল ইসলাম দায়িত্ব পাওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করলে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অধ্যাপক মোঃ মনজুরুল হাসান নতুন কমিটির ওপর স্থগিতাদেশে চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এবং এ বি এম আলতাফ হোসাইন এর বেঞ্চ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন।
ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি আরেকটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং হাবিবুল গণির বেঞ্চ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রিট প্রত্যাহারের দাবিতে অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসানকে বিভাগে অবরুদ্ধ করে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেয় ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৩৭তম ব্যাচের ৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের লিখিত পরীক্ষা দিচ্ছেন। রিট আবেদনের ফলে ঐ ব্যাচের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফলাফল প্রকাশে বিলম্বিত হলে তাদের শিক্ষা জীবন আরো দীর্ঘ হবে এবং বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গও হতে পারে অনেকের।
এছাড়া অন্যান্য চাকরিতে তারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলের জন্য চাকরি করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করলেও শুধুমাত্র মনজুরুল হাসানের কারণে তারা পিছিয়ে পড়েছে।
অধ্যাপক মনজুরুল হাসান ওই ব্যাচের একটি কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষার নম্বর জমা দেন নি। পরীক্ষা অফিস তাকে একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি নম্বর জমা দেন নি এবং নম্বর জমা দেবেন কিনা সে বিষয়েও কোন জবাব দেন নি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. মনজুরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে আগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করা হয়েছে। আমি এই অনিয়নের বিরুদ্ধে রিট করেছি। এখানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আমি কোন রিট করি নি।
নতুন কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক মনজুরুল হাসান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময় আমি ওই কমিটির সিনিয়র সদস্য হিসেবে তাকে কয়েকবার লিখিতভাবে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করতে বলি। কিন্তু তিনি তা করেন নি।
পরে শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক সভার সিদ্ধান্তক্রমে আমাকে সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে আমি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করি। শনিবার (আজ) তাদের থিসিসের শেষ সাক্ষাৎকার ।
সমাজবিজ্ঞান অণুষদের ডিন অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৪