রাবি(রাজশাহী): প্যারিস রোডের অবস্থা খুব খারাপ, আমার কান্না পাচ্ছে, বড় বড় গাছগুলো একদম উপড়ে গেছে। এখানে সেই ছায়াঘেরা পরিবেশ আর নেই।
শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী প্যারিস রোডে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বন্ধুকে এসব কথা বলছিলেন এক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে শের-ই-বাংলা হল প্রর্যন্ত রাস্তাটি প্যারিস রোড নামে পরিচিত। চোখ ধাঁধানো গগণচূঁড়া গাছ দিয়ে ঘেরা এই রাস্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রধান গর্বের বিষয়।
পিচঢালা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিরুহের মতো গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে কয়েকগুণ। এই গাছগুলো প্রায় যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করেছে প্রকৃতিপ্রেমী হাজারো মানুষকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হাজারো স্মৃতি বিজড়িত এই গগণচূঁড়া গাছগুলো। বৃহস্পতিবার রাতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে সাতটি গগণচূঁড়া গাছ সমূলে উপড়ে গেছে। ডাল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সবক’টি গাছ।
প্যারিস রোডের এ গাছে অসংখ্য পাখি বাসা বেঁধে বাস করতো। সে বাসাগুলোও মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এদিন এলাকার শতাধিক গাছ ভেঙে পড়ে ঝড়ের তাণ্ডবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের গর্বের বিষয়, প্রাণের প্রিয় এ গাছগুলোকে সমূলে পড়ে থাকতে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কেঁদে ফেলেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়দা জ্যোতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্যারিস রোডের গাছগুলো আমাদের পরিবারের সদস্যের মতো। এ গাছগুলো নিয়ে আমরা গর্ব করি। গাছগুলোকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা আর গর্ব করতে পারবো না।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালের দিকে রোপণ করা হয় গগণচূঁড়া গাছগুলি। গাছগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এর সৌন্দর্য। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত হতে থাকে রাস্তাটি, ফ্রান্সের প্যারিসের মতো দেখা যায়, তাই এর পরিচিতি পায় প্যারিস রোড হিসেবে। রাজশাহীর একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয় এটি।
বৃহস্পতিবার রাতের রাক্ষুসে কালবৈশাখীর তাণ্ডব হতবাক করেছে শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসের প্রিয় গগণচূঁড়া গাছগুলো ধ্বংস হয়ে ক্যাম্পাসের অবকাঠামো বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি বিপর্যস্ত করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৪