ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিগত কয়েক মাস ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও ইদানিং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে তাদের পদচারণা বেড়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত প্রায় প্রতিরাতেই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ককটেল ও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। ফলে রমজান মাসের ছুটিকে সামনে রেখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, দিনের বেলায় ক্লাস চলাকালীন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। এমনকি বঙ্গবন্ধু হলের টিভি রুম ও গেম রুমও রয়েছে বহিরাগতদের দখলে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসের কোনো চাকরি নিয়োগ, কাজের টেন্ডার ইত্যাদিকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করতে চায় এ বহিরাগতরা।
ক্যাম্পাসের অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায় ইতোপূর্বে ইবির বড় বড় সংর্ঘষগুলোর নৈপথ্যে ছিল বহিরাগতরা। এর আগে গত ২০০৯ সালে বিভিন্ন রকম নিয়োগ ও টেন্ডারকে কেন্দ্র করে তিন মাসের মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে মানুষের একটি কাটা মাথা ও ক্যাম্পাসের মফিজ লেকে তিনটি গলা কাটা লাশ পাওয়া যায়।
২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের সিন্ডিকেটে চাকরি না হওয়ায় চাকরি প্রত্যাশী ও স্থানীয় বহিরাগতদের বিভিন্ন রকম নাশকতার দরুণ ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর, অফিস ভাঙচুর, বাস পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়।
এর আগে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকার বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমানে আবারো ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের এই আনাগোনা দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেক এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচ বহিরাগত ক্যাডারকে প্রক্টরিয়াল বডির তৎপরতায় আটক করা হয়েছে। পরে তাদের কুষ্টিয়া আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণরুপে বহিরাগতমুক্ত করতে ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত জিরো টলারেন্স’ প্রজ্ঞাপন জারি করেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।
ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, ক্যাম্পাসের যেকোন স্থানে বিনা কারণে কোনো বহিরাগত লোকজনের অবস্থান নিষিদ্ধ ও ক্যাম্পাসের কোনোরকম সভা-সমাবেশে বহিরাগতদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকে গত কয়েক মাস ক্যাম্পাস এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা কম থকালেও বর্তমানে তা আবারো বেড়ে চলেছে।
গত কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে দিন-রাত যেকোনো সময় তাদের মোটরবাইকে করে মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অফিসে তাদের নিয়মিত গোপন বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন একটি সূত্র।
এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত রাতে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণও গুলির শব্দ শোনা গেছে। সম্ভাব্য টেন্ডারকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের একাংশের ইন্ধনে বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী ও ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাকর্মী এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এসব বিষয়ে ইবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বহিরাগত ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৪