ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৫ অধ্যাপক

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৪
সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৫ অধ্যাপক

ঢাকা: নিয়ম না মেনে চলতেই যেন ভালোবাসে আশা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না এই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে।



বছরের পর বছর ধরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাতেগোনা কয়েকজন অধ্যাপক দিয়েই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে।

আশাতে ভিসি থাকলেও প্রো-ভিসি নেই। ব্যস্ত সড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি করে পাঠদানের মতো কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।    

ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরেও নেওয়া হয় নানা ফি। ইংরেজিতে শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করতে কোর্স করানোর নামে প্রত্যেক সেমিস্টারেই নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামের তালিকা থাকলেও তাদের কোনো প্রোফাইল সেখানে নেই। অধিকাংশ বিভাগই চলছে নামকাওয়াস্তে কয়েকজন জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে।

একেকটি বিভাগে একজন মাত্র অধ্যাপক রাখা হয়। এমনকি কোনো বিভাগের পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপকও নেই। এর বাইরে লেকচারার পর্যায়ের সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের দিয়েই পাঠদান করা হচ্ছে সবগুলো বিভাগে।

৫ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য ৯০ জন শিক্ষক রয়েছেন। সেই হিসেবে ৬২ জন শিক্ষার্থী প্রতি একজন শিক্ষক রয়েছেন। খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে খোদ উপাচার্য অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন নিজেও কিছুই জানেন না।  

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক প্রতিবেদনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৬ বলা হলেও আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই হার ১:৬২।  

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইংরেজি বিভাগে মাত্র একজন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক। বাকি ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক দুইজন। আর ৯ জনই লেকচারার।

আইন বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা ১৪ জন। এর মধ্যে একজন মাত্র পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক। বাকি ১৩ জনের মধ্যে চারজন সহকারী অধ্যাপক। এর বাইরে ৮ জনই লেকচারার।

৩১ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিবিএ। দুইজন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক বাকি ৯ জন সহকারী অধ্যাপক। বাকি ২০ জনই লেকচারার।

ফার্মেসি বিভাগে একজন অধ্যাপক, তিনজন সহকারী অধ্যাপক ছাড়া ১৫ জন শিক্ষকের বাকি সবাই লেকচারার। এর মধ্যে পাবলিক হেলথ বিভাগের নাম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে এ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।
    
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ চলছে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক ছাড়াই। এটি চলছে একজন সহকারী অধ্যাপকের নেতৃত্বে তিনজন লেকচারার দিয়ে। তবে এই বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষকের প্রোফাইল রয়েছে।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তিনজন থাকলেও উপদেষ্টা প্যানেল নাম দিয়ে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের নাম রাখা হয়েছে। কমিশনের আইনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে সভা করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয় না।  

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়মানুযায়ী প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টি, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির সভা হওয়ার কথা। কিন্তু আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে এ ধরনের কোনো সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি।

কমিশন ট্রাস্টি বোর্ড, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার সংখ্যা ও সম্মানির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ধরনের সভা না করেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে আশা। তাছাড়া অর্থ কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

কারিকুলাম হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় ইচ্ছেমতো কারিকুলাম পরিবর্তন করা হচ্ছে।
  
ভর্তির সময় উল্লেখিত টিউশন ফি’র তুলনায় বেশি অর্থ আদায় করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের না জানিয়েও বিভিন্ন সময়ে সেমিস্টার ফি বাড়ানো হচ্ছে প্রত্যেকটি বিভাগে।

মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। প্রতিষ্ঠার পর ৮ বছর পার করেছে তারা। কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। আইন লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করলেও বারবার আলটিমেটাম দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

বোর্ড অব ট্রাস্টিতে ৯ জন সদস্য রয়েছে। ট্রাস্টিতে সমাজের প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মঞ্জুরি কমিশন কিংবা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে। ১৩ সদস্যের একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে। অর্থ কমিটির বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।

চান্স পেলেও অর্থদণ্ড:
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন তাদেরও অভিনব প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় যারা ইংরেজিতে কম নম্বর পাবেন তাদেরকে একটি ইংরেজি কোর্স করানোর নামে বাড়তি ৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ ভর্তি পরীক্ষার আগে বিষয়টি সম্পর্কে কোনো শিক্ষার্থীই কিছু জানেন না। ইংরেজি দক্ষতার বাড়ানোর নামে এক প্রকার প্রতারণা করেই প্রতিটি সেমিস্টারে অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।  

উপাচার্যের বক্তব্য
আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন, সবকিছুই নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। বোর্ড অব ট্রাস্টি কিংবা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা এখন নিয়মিত করছি।

সভা না হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এর আগে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। তবে এখন সবই নিয়মিত হচ্ছে।

হাতে গোনা দু’একজন অধ্যাপক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক বর্মন বলেন, সব বিভাগে একজন অধ্যাপক নয়, একাধিক অধ্যাপকও রয়েছে।
 
উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন, ব্যবসায় প্রশাসনে একাধিক অধ্যাপক কাজ করছেন। তবে আমরা নিজেরা শিক্ষক তৈরির সুযোগ করে দিতেই জুনিয়রদের দিয়ে এই মুহূর্তে পাঠদান করাচ্ছি।   

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে আমরা পুরোটা না হলেও অন্তত কিছু বিভাগ আশুলিয়ায় কেনা জায়গায় তৈরি হওয়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে পারবো।

ইংরেজি শেখানোর জন্য যে অর্থ নেওয়া হচ্ছে তা তিনি স্বীকার করেন। তবে ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্যই এই অর্থ নেওয়া হচ্ছে।   

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ