ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১ মহররম ১৪৪৭

শিক্ষা

রক্ত বিক্রি করে হলেও ডাক্তারি পড়াবো

তুষার তুহিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৫, জুন ২, ২০১৫
রক্ত বিক্রি করে হলেও ডাক্তারি পড়াবো ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার: ও তো আমার ভাইপো নয়, ও আমার ছেলে। প্রয়োজনে আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও ওকে ডাক্তারি পড়াবো।



২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়কের চয়ন পালের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রতিজ্ঞ চাচী দ্বীপ্তি পাল বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।

ছোটবেলা থেকেই চয়ন মানুষ হয়েছে চাচীর কাছেই। দীর্ঘ নয় বছর ধরে আপন ছেলের মতোই তার দেখাশোনা করছেন পরিবারটি।
 
চয়ন পাল চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালি উপজেলার নাপুরার পালপাড়া গ্রামের নগর বাঁশি পালের তৃতীয় সন্তান। তার বাবা পরিবারের সদস্যদের খাবার ঠিকমতো জোগাতে পারেন না। সে কারণে নয় বছর আগে ছোট শিশু চয়নের লালন পালনের দায়িত্ব নেয় তার চাচা বাদল কান্তি পাল।
 
কিন্তু তার চাচার আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। কক্সবাজার সরকারি সদর হাসপাতালে সামান্য কেরানির চাকরি করেন তিনি। ভাড়া বাড়িতে থাকেন হাসপাতালের পাশেই। তারও রয়েছে দুই মেয়ে। তারপরও বড় ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার সংকল্প নিয়ে ভাইপো চয়ন পালকে গ্রহণ করেন সাদরে।
 
২০০৬ সালে চাচার হাত ধরে কক্সবাজারে আসে চয়ন। তখন থেকেই তার আশ্রয়স্থল শহরের হাসপাতাল সড়কে বঙ্গ পাহাড়ে চাচার সংসারে। শান্তশিষ্ট ও মেধাবী  চয়ন অল্প সময়েই চাচী দীপ্তি পালের মন কেড়ে নেয়। চাচী তাকে নিজ ছেলের মতো আদরযত্ন করতে শুরু করেন।

লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ দেখে তাকে ভর্তি করা হয় বাড়ির পাশের সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই স্কুল থেকে ২০১০ সালে পিএসসি পাস করে সে। এরপর ভর্তি হয় শহরের বায়তুশ জব্বারিয়া একাডেমিতে। এখান থেকেই জিপিএ- ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে সে। আর তার এ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত চয়নের পরিবার। তাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন তার চাচা-চাচী।
 
চয়নের চাচী দীপ্তি পাল বাংলানিউজকে জানান, তিনি ভাবতেও পারেননি চয়ন এতো ভালো রেজাল্ট করবে। ছেলেটাকে লেখাপড়া করার জন্য আলাদা কোনো কক্ষ দিতে পারেন নি তারা। ড্রইরুমে বসেই পড়ালেখা করতে হয়েছে চয়নকে।
 
এদিকে চয়নের চোখে এখন রঙ্গিন স্বপ্ন। সে ডাক্তার হতে চায়। সেবা করতে চায় গরীব-দুখীদের।  
 
চয়ন বাংলানিউজকে জানায়, চাচা-চাচী তাকে আপন ছেলের মতো মানুষ করেছে। চাচাত বোনেরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতা না পেলে এসএসসিতে জিপিএ- ৫ পাওয়া তো দূরের কথা, লেখাপড়া করাই হতো না।

সে জানান, বড় হয়ে সে ডাক্তার হতে চায়। চাচার পরিবারের হাল ধরতে চায়।
 
চয়নের চাচা বাদল কান্তি পাল বাংলানিউজকে জানান, তার বড় ভাই যখন চয়নকে তার হাতে তুলে দেয়, তখন থেকেই তিনি চেষ্টা করেছেন চয়নকে মানুষ করার। সাধ্যমত সবসময় চয়নের পাশে থেকেছে পরিবারের সবাই।

ভাইপোর স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত তিনি ও তার পরিবার বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৫     
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।