নড়াইল: শিক্ষকের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মেধাবী ছাত্রী ফারিয়াকে এসএসসি’তে ফেল করানোর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে নড়াইলবাসী। অব্যাহত রয়েছে নানা কর্মসূচি।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা নড়াইলের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (৭ জুন) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা।
মানববন্ধন থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ফসিয়ার রহমানকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য দাবি জানানো হয়।
এলাকাবাসী জানান, ফারিয়া ইসলাম নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার রোল নং ১১২৪২৮ এবং রেজিঃ নং- ১২৯৩৬৫৪৪৮০। নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে ফারিয়া ইসলাম ৫ম শ্রেণিতে ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।
এরপর ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণিতে কখনও প্রথম আবার কখনও ২য় স্থান লাভ করেছে। এমনকি স্কুলের এসএসসি’র টেস্ট পরীক্ষায় যে ৩ ছাত্রী গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে ফারিয়া তাদের একজন।
অন্য মেধাবী ছাত্রীদের মতো সব বিষয়ে এ প্লাস নম্বর থাকা সত্ত্বেও ফারিয়াকে বিদ্যালয় থেকে ৫টি ব্যবহারিক পরীক্ষায় ২৫ করে নম্বর দেওয়া হলেও কম্পিউটারে ৫টি বিষয় ১৫ করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। ফেল করানো হয়েছে ফিজিক্সে। পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর থেকে ওই পরিবারের আনন্দ একেবারে ম্লান হয়ে গেছে।
মেয়ের হতাশ চেহারায় উৎকণ্ঠিত বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রশাসক, সাংবাদিকসহ সব মহলে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রতিকারের আশায়।
ফারিয়ার পরিবারের অভিযোগ, ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন শিক্ষক ফসিয়ার রহমান তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। সে সময় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফারিয়ার পরিবার প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরিচালক এবং বোর্ড কন্ট্রোলারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। এ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় ফসিয়ারকে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
এর কিছুদিন পরে তিনি নড়াইল সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় স্কুল থেকে পূর্ণ ২৫ মার্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও কম্পিউটার সিটে ফারিয়াকে ১৫ করে মার্ক দেখিয়েছে অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমান।
এছাড়া তিনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রকের কমিটিতে থাকার সুবাদে ফারিয়ার পদার্থ বিজ্ঞান খাতায় কোন কারচুপি করেছে বলেও তাদের অভিযোগ। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। তাকে প্রত্যেক ব্যবহারিক পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ২৫ নম্বর দেওয়া হলেও কম্পিউটরে ১৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে। এত ভালো ছাত্রী এরকম ফলাফল হতাশা জনক। আমরা (৩১ মে) দুপুরে শিক্ষক এঘটনার জন্য সভা করেছি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আ. গাফফার খান বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েটি এবং তার পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট নড়াইল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি বোর্ড কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকৃত মার্ক এবং যে মার্ক পাঠানো হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হবে। মেধাবী এই মেয়েটি যেন বিনা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা সবাইকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
পিসি/