টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে আট অদম্য মেধাবী দারিদ্র্যকে জয় করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। অভাব অনটনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওরা আধার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে।
কষ্টের অন্ত নেই। অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। দুবেলা দুই মুঠো ভাল খাবার জোটে না তাদের ভাগ্যে। চাহিদা মাফিক জোগাড় হয়নি পোষাক। তবুও দমে যায়নি। স্বপ্ন পূরণের সংগ্রামে তারা হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে হাসি ফুটিয়েছে অভাবী মা-বাবার মুখে।
শিক্ষা জীবনের প্রথম এ সাফল্যে তাদের দু’চোখে এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে অভিভাবকের মনে শঙ্কার পাহাড়। অর্থাভাবে ভাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাদের। অনেকের ডাক্তার, প্রকৌশলী ও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে দারিদ্র্য। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই ওদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পিতৃহীন মেধাবী জনি নজরে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের। বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায় সে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। অভাবের মাঝে চলে তার শিক্ষা জীবন। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়া হয়নি। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে জনির মা হাসনা বেগম।

মেয়ের জন্য গৃহ শিক্ষক রাখতে পরেন নি। তাই খাস শাহজানী এমএ করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও পরিবারের আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত মেয়ে তামান্নার এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হবে তো?

মেধাবী রাসেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন মা হালিমা বেগম। শেষ পর্যন্ত মেধাবী ছেলে রাসেল উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারবে তো? এই আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে অসহায় বাবা-মাকে।

মা-বাবার অনেক আশা মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। তার মেয়ে মৃদুর স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের দারিদ্র্যতা।

অন্যের জমি চাষ করে চলে তাদের সংসার। অভাব অনটনের মধ্যেও হাল ছাড়েননি। মেয়ের কৃতিত্বে আনন্দে আত্মহারা বাবা মা। শুধু টাকার অভাবে মেধাবী মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

দু’বেলা ভাল মতো খাবার জোটেনা, ইচ্ছে থাকা সত্বেও ভালো পোষাক জোগাড় করতে পারেন না তার অভিভাবক। গ্রামের রাস্তার পাশে পান-বিড়ির দোকান করে সংসার চালানোই এখন একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বাবা আনোয়ার হোসেনের।
এত কষ্টের পরেও থেমে থাকেনি সুরমার পড়া লেখা। পরিবারের আশা সুরমা একদিন অনেক বড় হয়ে তাদের মুখ উজ্জল করবে। সুরমা কি সত্যিই পারবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে নাকি মাঝ পথেই থেমে যাবে?

কিভাবে তারিনের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাবে অসহায় বাবা মা। শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কি না এই ভাবনায় রয়েছে মেধাবী তারিন আক্তার।

সংসারের টানা পোড়েনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে মেয়ে মিমকে লেখা পড়ার খরচ জুগিয়েছেন তারা। ভাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ কিভাবে জোগান দিবেন -এ ভাবনা এখন তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
এমজেড/এটি