ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সমাবর্তনপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৭
সমাবর্তনপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন উচ্ছ্বাস-খুনসুটিতে। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘এইতো সেদিন ক্যাম্পাসে এসেছিলাম উচ্চ শিক্ষা নিতে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে কেটে গেছে জীবনের পাঁচটি বসন্ত। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় জুড়ে রয়েছে আমার অজস্র স্মৃতি। কোনোটিই ভুলবার নয়। আর মাত্র একদিন পরেই ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিচ্ছি। আজকের দিনের মুহূর্ত আর ফিরে আসবে না। এজন্য বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।’

দলবলে ফ্রেমবন্দি হওয়ার সময় বাংলানিউজের কাছে আবেগতাড়িত কণ্ঠে এ কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী রাশনা শারমিন।
 
শারমিনের মতো হাজারো গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে ঢাবি ক্যাম্পাস।

রাত পোহালেই (শনিবার ৪ মার্চ) এখানে অনুষ্ঠিত হবে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ৫০তম সমাবর্তন।

সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগেই সকল গ্র্যাজুয়েটদের দেওয়া হয় গাউন, ক্যাপ ও সমাবর্তন ব্যাগ। এর পর থেকেই শুরু হয় নিজের স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাসের শেষ মুহূর্তগুলোকে ধারণ করে রাখার মধুর প্রতিযোগিতা।  
 
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তন ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ক্যাম্পাস। ব্যানার ফেস্টুনসহ নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ গোটা ক্যাম্পাস। সবখানেই কালো গাউন পরিহিতদের সরব পদচারণা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হল, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, কলা ভবন, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, সিনেট ভবনের সামনে সমাবর্তনের আগে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করছেন গ্রাজুয়েটরা। পাশাপাশি সমাবর্তনের ক্যাপ আকাশে ছুড়ে দিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাস–উচ্ছ্বাসের প্রকাশে মেতে উঠছেন। সমাবর্তনপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমগ্র্যাজুয়েটদের ঘোরাঘুরি চলছে বিভিন্ন পর্বে। কেউবা বিভাগের বন্ধু আবার হলের বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ হয়ে ছবি তুলছেন। আবার অনেকে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন পরিবারের গর্বিত সদস্যদের। এসময় তাদের সঙ্গে আসা মা-বাবাদেরও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় সন্তানদের সাফল্যে।
 
এদিকে, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমদ, উপ-উপাচার্য ( প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা অংশ নেন।  

অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে ও মূল মঞ্চে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট বিভিন্ন ধরনের তল্লাশি চালায়। আর গ্র্যাজুয়েটরাও ঘুরে ঘুরে দেখেন পুরো অনুষ্ঠানস্থল।  

সেখানে কথা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক রাসেলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বীকৃতি। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়ে জীবনের আরও বড় পর্যায়ে পদার্পণ করে একজন শিক্ষার্থী। দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই এখন আমার প্রধান লক্ষ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা শিখেছি তা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো।  

বলতে বলতে এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করছেন গ্র্যাজুয়েটরা।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ থেকে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হবে সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবারের সমাবর্তন বক্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রেসিডেন্ট এবং উপাচার্য অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তন বক্তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হবে।  

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমাবর্তন আয়োজন বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, সমাবর্তন দিবস শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিবসটির জন্য শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা একাডেমিক সার্টিফিকেট ও পদক গ্রহণ করে থাকেন। অথচ স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তরকালে দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।  

বর্তমানে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এই সংস্কৃতি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।  
 
এবারের সমাবর্তনে ৯৪টি স্বর্ণপদকের জন্য ৮০জন পদকপ্রাপ্ত, ৬১ জন পিএইচডি, ৪৩ জন এমফিল এবং ১৭ হাজার ৮৭৫ জন গ্র্যাজুয়েট নেবেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
এসকেবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।