শাবিপ্রবি (সিলেট): উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তিন বছরপূর্ণ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেশনজটমুক্ত, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তিনি।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে প্রায় ১৩ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে গাউন ও হ্যাট দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো ও শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দৃষ্টিনন্দন করে বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনপুলে সংযোজন হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ পাঁচটি নতুন গাড়ি। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবকে আধুনিকায়ন, মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়া ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারে ডে-কেয়ার সেবা চালু এবং প্রথমবার স্থায়ী কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় নেওয়া হয়েছে ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের মানসম্মত গেস্ট হাউস। ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও। করোনাতেও শুরু হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় (২০১৯-২০ সেশন) ডোপ টেস্ট করে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন লেখা ও গবেষণা প্লেগারিজম মুক্ত রাখতে টার্নিশন সফটওয়্যারের ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি জার্নাল ও মানসম্পন্ন বার্ষিক প্রতিবেদন হালনাগাদ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ব্লক চেইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এরইমধ্যে গেল জানুয়ারিতে অর্জন করেছে 'বেস্ট ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড'।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সোনালী ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ১০০ কোটি টাকা লোনের ব্যবস্থা ও তাদের গৃহ নির্মাণ সুবিধা দিতে রেয়াতী সুদে ৭৫ লাখ (সর্বোচ্চ) টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলমান সময়ের মধ্যেও বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাছাড়া করোনা মহামারির প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা প্রদান ও বন্যাদুর্গত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চলমান রয়েছে। দেশের সংকটে পাশে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক কোটি দশ লাখ টাকা ব্যয় করে করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের সঙ্গে করপোরেট চুক্তি অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা অগ্রাধিকার ও দ্রুততা নিশ্চিত করে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাসের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে তরুণ শিক্ষকদের ল্যাপটপ ক্রয় বাবদ ৫০ হাজার ও এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে দুই হাজার ২১৬ জনকে ১৫ জিবি ডাটা (চলনান থাকবে) দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ দীর্ঘদিনের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়কে সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফরিদ উদ্দিন। সর্বশেষ তা গত ৯ আগস্ট সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্তির জন্য সিলেট জেলা প্রশাসন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে পরিশেষে সিসিকের অন্তর্ভুক্তির মুখ দেখে শাবিপ্রবি।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি মনে প্রাণে ধারণ ও লালন করি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, অবকাঠামো, সুশাসন, সেশনজট ও র্যাগিংমুক্ত এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তার জন্য কোথাও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি। আল্লাহর রহমতে এবং সবার সজযোগিতার ফলে আমরা প্রায় সব সেক্টরে সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশাসন ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শতভাগ সুশাসন বিরাজমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনো ধরনের র্যাগিং নেই। তাছাড়া আমরা যে প্রজেক্টগুলো হাতে নিয়েছি তা বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০০ বছরেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
করোনার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতেও আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ শিক্ষার্থীরা কোনো বিপাকে বা সেশনজটে পড়ুক তা আমরা চাই না। তার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যা যা সাপোর্ট দরকার তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে পাস করে বের হয়ে তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করুক।
উপাচার্য বলেন, সবমিলিয়ে আমরা এখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রোল মডেল। সবাই এখন আমাদের অনুসরণ করে। আমাদের কাজগুলো অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। আশা করি খুব দ্রুতই আমরা বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করবো।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজ কর্মক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীনের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, একটি কুচক্রী মহল সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ মহল সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়েরর পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। এজন্য তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক, সুন্দরভাবে চলুক তা তাদের কাম্য নয়। তবে যতই বাধা আসুক না কেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা একদিন ঠিকই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো ইনশাআল্লাহ। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য।
শাবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২০
আরবি/