ঢাকা, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ জুলাই ২০২৫, ০১ সফর ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে প্রভাবশালী নেতারা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৫, জুলাই ২৬, ২০২৫
বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে প্রভাবশালী নেতারা (ওপরে বাম থেকে) মজিবুর রহমান সারোয়ার, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, এবায়েদুল হক চান, (নিচে বাম থেকে) সৈয়দ মোয়াজ্জোম হোসেন আলাল, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল

বরিশাল: বিভাগের সদর দপ্তর বরিশাল-৫ (সদর) আসন সার্বিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এ আসনটি থেকে গোটা বিভাগ পরিচালনা করা সম্ভব হয়।

আর স্বাধীনতার পর এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী নেতারা। জুলাই আন্দোলনের পরে আবারও নতুন করে এ আসনের প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ডাকসাইটে নেতারা।

১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ আসনে দুটি উপ নির্বাচনসহ ১০টির মধ্যে ৮টিতে জয় পেয়েছিল বিএনপি। এছাড়া আওয়ামী লীগ একবার ১৯৭৩ সালে এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি একবার বিজয়ী হয়।  

এই আসনে বিজয়ী বিএনপির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতাদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, তার ছেলে নাসিম বিশ্বাস ও মজিবুর রহমান সরোয়ার একাধিকবার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে সব থেকে বেশিবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার। তিনি টানা তিনবারসহ চারবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবারেও তিনি এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র চাইবেন বলে অনুসারীরা জানিয়েছেন। তবে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা বরিশালের সন্তান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এই দুই উপদেষ্টার সাথে বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চান, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকও আছেন তালিকায়।

পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীদের সবাই বিরোধী দলের রাজনীতিতে থেকে বিগত সময়ে একাধিক মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন। সেইসাথে কারবারণও করেছেন একাধিকবার। ফলে বলাই যায়, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল সদর আসনে বিএনপির ভেতরে চলছে আরেক লড়াই। কে পাবেন দলীয় প্রতীক, আর তা নিয়ে যেন ভেতরকার ঠান্ডা যুদ্ধ টের পাচ্ছেন রাজনীতি সচেতন মহল।

যদিও সাড়ে ৪ লাখ ভোটারের এ আসনে ভিন্নতা রয়েছে আলোচনায় থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থীর ক্ষেত্রে। এ দলে সবাই তাকিয়ে থাকেন দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালের মতো এবারেও এ আসনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গেল বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোটের দিন মেয়র প্রার্থী এই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলারও শিকার হয়েছিলেন।

অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তাদের ঘোষাণা অনুযায়ী এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযয্ম হোসাইন হেলাল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। যিনি ব্যক্তি হিসেবে পরিচ্ছন্ন ইমেজের এবং দলের জন্য ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। এর বাইরে সুযোগ পেলে এ আসনে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তিনিও পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

তবে তফশিল ঘোষণা হলে আরও কিছু দল তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারে এ আসন থেকে।

এই আসনের তরুণ ভোটার আরিফুর রহমান বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তা সবাই জানে। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রার্থী হোক না কেন বরিশাল সদর আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ভোটার সম্পৃক্ত নির্বাচনে এখানে জয়ী হতে হলে বিএনপিকেই বড় প্রতিপক্ষ বলে মেনে নিতে হবে অপর প্রার্থীদের।

গত ১৭ বছরে ২৫টির ওপর মামলার আসামি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার। তিনি নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, সংস্কারও যেমন প্রয়োজন তেমনি নির্বাচনও প্রয়োজন, মানুষ চায় ভোট দিতে। তাই নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। এসময় তিনি ত্রয়োদশ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথাও জানান বাংলানিউজকে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযয্ম হোসাইন হেলাল বলেন, নতুন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন চায় সেই পরিবর্তনের নীতি আদর্শ নিয়ে জামায়াত ইসলাম কাজ করছে। আশা করি আমাদের সাথে ভোটাররা থাকবেন এবং আগামীর সুন্দর দেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

একাধিক মামলার আসামি ও বহুবার কারাবরণকারী এই নেতা আশা করেন, জামায়াতে ইসলামী বরিশালের সবকয়টি আসন থেকে বিজয়ী হবে।  

বিভিন্ন সংস্থার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের নির্বাচন পর্যবেক্ষককারী সাংবাদিক ও লেখক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, বরিশাল সদর আসনটি শুধু জেলা সদরের জন্য নয়, বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার হিসেবেও প্রতিটি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব দলই চাইবে এ আসনে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে রাখতে। আর সেটা হলে এ আসনের নির্বাচন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

উল্লেখ্য, একাধিকবার সীমানার পরিবর্তন ঘটলেও বরিশাল-৫ আসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখান থেকে ১৯৭৩ সালে আবদুল মান্নান হাওলাদার (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে সুনীল কুমার গুপ্ত (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ১৯৮৬ সালে এম. মতিউর রহমান (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে আব্দুর রহমান বিশ্বাস (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ডিসেম্বর ১৯৯১ এর উপ-নির্বাচনে মজিবুর রহমান সরোয়ার (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তে নাসিম বিশ্বাস (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), জুন ১৯৯৬ তে        নাসিম বিশ্বাস (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) নির্বাচিত হয়েছে। নাসিম বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ১৯৯৮ এর উপ-নির্বাচন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা তিনবার মজিবুর রহমান সরোয়ার (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), জুন ২০১৪ এর উপ-নির্বাচনে জেবুন্নেসা আফরোজ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা দুইবার জাহিদ ফারুক শামীম (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) নির্বাচিত হয়েছেন।

এমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।