ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

এক বছরে দুই ডজন দলের আত্মপ্রকাশ, নিবন্ধন পেয়েছে ছয়টি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১৭, আগস্ট ৫, ২০২৫
এক বছরে দুই ডজন দলের আত্মপ্রকাশ, নিবন্ধন পেয়েছে ছয়টি

ঢাকা: জুলাই অভ্যুত্থানে পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন দল গঠনের হিড়িক লেগে যায়। এক বছরে দুই ডজন দলের আত্ম প্রকাশ হয়।

আর এই সময়ে নিবন্ধন পেয়ে নিজ দলের প্রতীকে ভোটের অধিকার পায় ছয়টি দল।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হলেও নিবন্ধন না পেলে কমিশনের বিবেচনায় সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কেননা, কমিশন কেবল নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়েই কাজ করে থাকে। তাই তাদের নিবন্ধন সনদ নিয়েই ভোটের রাজনীতিতে নামতে হবে। ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়া চলছে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, গত এক বছরে ছয়টি দল নিবন্ধন সনদ পেয়েছে। দলগুলো বিগত সময়ে আবেদন করেছিল। এদের অধিকাংশই আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে।

মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি (ঈগল) নিবন্ধন পেয়েছে গত বছরের ২১ আগস্ট। এরপর মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য (কেটলি) ও নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ-জিওপি (ট্রাক) পেয়েছে ২ সেপ্টেম্বর, জোনাইদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন (মাথাল) ১৭ সেপ্টেম্বর, একেএম আনোয়ারুল ইসরাম চানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ফুলকপি) চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ও সুকৃতি কুমার মন্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি (রকেট) নিবন্ধন পেয়েছে ৯ এপ্রিল।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ২৩টি দল গঠন হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। এদের অনেকেই নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনও করেছে। তবে কোনো দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, ২০ সেপ্টেম্বর সমতা পার্টি, ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), ২৭ সেপ্টেম্বর সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মুক্তির ডাক, ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিপ্লবী পার্টি আত্মপ্রকাশ করে।
 
এছাড়া ২০২৫ সালের ৪ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে দেশ জনতা পার্টি, ২৮ জানুয়ারি আম জনতার দল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ১৩ মার্চ জনতার বাংলাদেশ পার্টি, ২০ মার্চ জনতার দল, ১১ এপ্রিল গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ১৩ এপ্রিল ভাসানী জনশক্তি পার্টি, ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, (যা পরবর্তীতে আম জনগণ পার্টি নামে পরিবর্তন হয়) ও ২৫ এপ্রিল গঠন হয় জনতা পার্টি বাংলাদেশ।

এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ছাত্রদের দল-এনসিপি। এছাড়া ডেসটিনির রফিকুল আমিনের গড়া আম জনগণ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ থেকে বের হয়ে আসা একাংশের নেতৃত্বে থাকা আম জনতার দল ও চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি বাংলাদেশও রয়েছে আলোচনায়।

নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হলেও নিবন্ধন মিলবে কি?
জানা গেছে, নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করলে এবার নতুন পুরনো মিলিয়ে ১৪৫টি দল আবেদন করে। এদের অধিকাংশই আগে নিবন্ধন চেয়ে পায়নি। এবারও খুব বেশি দল পাবে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে কোনো দলই পাশ করতে পারেনি। ফলে তাদের গত ৩ আগস্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছিল। সেখানেও সবগুলো দল সাড়া দেয়নি। ফলে যে দলগুলো সাড়া দেয়নি তাদের সুযোগ শেষ হয়ে গেছে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ১৪৫টি দল নিবন্ধন আবেদন করেছে। তথ্য ঘাটতি পূরণের জন্য চিঠি দেওয়ার পর ৩ আগস্টের মধ্যে ৮০টি দল তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। সময় বাড়াতে আবেদন করে ৬টি দল। ৫৯টি দল কোনো সাড়া দেয়নি।

তিনি বলেন, সময় বাড়ানো ও তথ্যের ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। ৮০টি দলের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছি, তথ্য ঘাটতি থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে এসব নিয়ম কানুনগুলোই সাধারণত খেয়াল করা হয়।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলী সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।

বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।

দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।

ইইউডি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।