ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮ মহররম ১৪৪৭

বিনোদন

ভালোবাসার মায়াজালে মন খারাপ উধাও হওয়ার গল্প- ‌‘চলো হারিয়ে যাই’

আনিসুর বুলবুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৩, জুলাই ৪, ২০২৫
ভালোবাসার মায়াজালে মন খারাপ উধাও হওয়ার গল্প- ‌‘চলো হারিয়ে যাই’ ছবি: সংগৃহীত

মন খারাপের মেঘ যখন আকাশ ঢেকে দেয়, তখন কি শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলেই দিন কাটে? নাকি সেই মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা যায় এক নতুন দিগন্তে? ‘চলো হারিয়ে যাই’ নাটকটি ঠিক এমনই এক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসেছে, যেখানে ছয়জন ভিন্ন ভিন্ন জীবনের মন খারাপ মানুষ এক ট্যুর গাইডের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন এক অদ্ভুত যাত্রায়। এখানে মন খারাপগুলো ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়, আর নতুন করে বাঁচার মানে খুঁজে পায় সবাই।

ছয়জন মানুষের ছয় রকম মন খারাপ। কারো প্রমোশন না হওয়ায় হতাশা, কারো প্রেমে জটিলতা, কারো একাকিত্বের হাহাকার, আবার কারো জীবনে শুধুই শূন্যতা।

এই মন খারাপের ভিড়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় বেরিয়ে পড়ার। আর তাদের এই যাত্রার সাথী হন এক তরুণ ট্যুর গাইড, যিনি নিজেও চাকরি ছেড়ে আসা এক মন খারাপের পথিক।

ক্যাপিটাল ড্রামা ইউটিউব চ্যানেলে বসুন্ধরা টিস্যু নিবেদিত এই রোমান্টিক নাটকটি যেন এক মন ভালো করার মন্ত্র নিয়ে এসেছে। তৌসিফ মাহবুব, তটিনী, আবুল হায়াত, দিলারা জামানদের প্রাণবন্ত অভিনয় আর হাসিব হোসেন রাখির দক্ষ নির্মাণ ও চিত্রনাট্য মিলে তৈরি হয়েছে এক অনবদ্য সৃষ্টি।

‘হারিয়ে যেতে চাই বহুদূর, হাতে হাত রেখে তোমার’ গানটিও অসম্ভব সুন্দর, যা নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে ভালোবাসার এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

নাটকটির সবচেয়ে সুন্দর বার্তাটি হলো, ‘ভালোলাগা শেয়ার করলে ভালোলাগা বাড়ে আর কষ্ট শেয়ার করলে কষ্ট কমে। ’ ভ্রমণের সন্ধ্যায় সবাই যখন একে অপরের জীবনের গল্প শেয়ার করেন, তখন এক জাদুকরী পরিবর্তন আসে। ট্যুর গাইড সামির যখন বলেন, ‘জীবনে সমস্যা এড়িয়ে চললে আরো সমস্যা বাড়বে।

সমস্যা সমাধান করতে হবে। কথা বলতে হবে। কথা না বললে দূরত্ব বাড়বে। দূরত্ব বাড়লে সম্পর্ক নষ্ট হবে,’ তখন ভালোবাসার বাঁধন যেন আরও মজবুত হয়। তরুণ জুটির প্রেমের মেঘ কেটে যায়, একাকী বৃদ্ধ দম্পতির মুখে ফোটে হাসি, আর এতিম ছেলেটিও যেন নতুন করে জীবনের স্বাদ পায়। প্রতিটি সংলাপ যেন মন ছুঁয়ে যায়, হৃদয়ে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়।

নাটকের শুরুর দিকে ট্যুর গাইড সামির যখন তার বদমেজাজি বসকে নির্দ্বিধায় বলেন, ‘আপনার পারসোনাল লাইফের ঝামেলার কারণে প্রতিদিন অফিসে এসে কলিগদের সাথে যে আচরণ করেন এটা কিন্তু ঠিক না। পারসোনাল লাইফের প্রবলেম পারসোনালভাবে সলভ করেন। আর না হলে জীবনে কোনো দিন শান্তি আসবে না,’ তখনই বোঝা যায়, আমাদের চারপাশের মানুষগুলোও হয়তো নিজেদের অজান্তেই মন খারাপের ভার বহন করে চলে। এই নাটকটি যেন সেই অদৃশ্য দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলার এক আহ্বান জানায়।

ভ্রমণে গিয়ে সামির যখন বলেন, ‘জার্নি শুরু করার আগে আমরা কিছুক্ষণ মেডিটেশন করব। কারণ, আমরা আমাদের জীবন এখনো মোবাইলের মধ্যেই কাটাই। এত সুন্দর একটা ট্রিপে এসে, এত সুন্দর একটা এনভাইরনমেন্টে থেকেও যদি মোবাইলে থাকতে পারেন তাহলে আমার তার জন্য শুধু আফসোস হয়,’ তখন সত্যিকারের ভ্রমণের অর্থটাই যেন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জীবনকে উপভোগ করার জন্য মুহূর্তগুলোকে ছুঁয়ে দেখার গুরুত্ব কতখানি, তা এই সংলাপটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে।

এরপর সামির আরও যোগ করেন, ‘আসলে আমরা আমাদের জীবনে অনেক স্ট্রেস নিয়ে বাঁচি। ভবিষ্যতে কী হবে, আগে কী হয়েছে, এই সবকিছু আমাদের একটা নেগেটিভ এনার্জি দিয়ে বশ করে রাখে। তাই আমি ভাবলাম যে, আমাদের ট্রিপটা শুরু হওয়ার আগে আমরা সবাই মিলে মেডিটেশন করি, এই নেগেটিভ এনার্জি ট্রান্সফার হয়ে পজিটিভ এনার্জি হয়ে যাবে। ’ এই কথাগুলো যেন আমাদের ক্লান্ত মনকে এক নতুন শক্তি যোগায়, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা ছেড়ে বর্তমানকে ভালোবাসার আহ্বান জানায়।

‘চলো হারিয়ে যাই’ নাটকটি ভালোবাসার এক নিবিড় পরশ বুলিয়ে দেয়। এর পরতে পরতে যেমন রয়েছে ভালোবাসার উষ্ণতা, তেমনই আছে মন খারাপকে দূর করার অনুপ্রেরণা। এই নাটকটি দেখলে কখন যে চোখের কোণে জল এসে পড়বে, আর কখন যে ভালো লাগার এক অনাবিল অনুভূতিতে মন ভরে উঠবে, তা আপনি টেরও পাবেন না।  

যারা মন ভালো করতে চান, কিংবা যারা মন খারাপের গভীরে ডুব দিতে চান, সবার জন্যই এই নাটকটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেবে। এই নাটকটি শুধু একটি গল্প নয়, এটি ভালোবাসার এক অদ্ভুত ভ্রমণ, যেখানে প্রতিটি মোড়ে আপনি নতুন করে বাঁচতে শিখবেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।