ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

পোশাকখাত নিয়ে অনন্ত জলিলের আবেগঘন বার্তা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২০
পোশাকখাত নিয়ে অনন্ত জলিলের আবেগঘন বার্তা

ঢাকা: দেশের তৈরি পোশাকখাতের অন্যতম ব্যবসায়ী ও বাংলা সিনেমার নায়ক অনন্ত জলিল এ খাত নিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন।

জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র তারকা নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া ভিডিও বার্তায় বলেন, একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তৈরি করতে কতটা পরিশ্রম, অর্থলগ্নি ও সম্পত্তি ব্যাংকে বন্ধক (মটগেজ) দিতে হয় তা একজন গার্মেন্টস উদ্যোক্তাই জানেন।

‘একজন উদ্যোক্তা যখন ব্যবসা শুরু করেন, তখন তাকে ৩০ কেজি করে ৬০ কেজি ওজনের ব্যাগভর্তি স্যাম্পল নিয়ে ট্রাভেল করে।

বায়ারদের দরজায় দরজায় গিয়ে এই স্যাম্পল দেখাতে হয়। ফ্যাক্টরি ও দেশ সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলতে হয় একটা বায়ারের মন জয়ের জন্য। অবিরাম চেষ্টায় অন্তত এক বছর চলে যায় বায়ারদের মন জয় করতে। এই এক বছর উদ্যোক্তাকে ফ্যাক্টরি চালাতে হয়। ’ 

‘এসময়ে সমস্ত পুঁজি, সমস্ত সম্পত্তি এমনকি স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। ’

আমাদের দেশে গার্মেন্টস সেক্টরের দুর্দিন শুরু হয় মূলত রানা প্লাজা ধসের পর থেকে। রানা প্লাজা মূলত শপিংসেন্টার ছিল, সেখানে কিছু কারখানাও ছিল। রানা প্লাজা ধসের পর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এ কারণে পুরো পৃথিবীতেই আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। চরম ইমেজ সংকটে ভোগে বাংলাদেশ। ’

পরবর্তীসময়ে দেশে আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান বায়ারদের সংগঠন অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্সের আবির্ভাব ঘটে। সংগঠন দুটি বিল্ডিং সেফটি, ফায়ার সেফটি ও ইলেকট্রিক সেফটি অডিট পরিচালনার করার ফলশ্রুতিতে ফ্যাক্টরিগুলো ব্যাপক সংস্কারের কাজে হাত দেয়। এ কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে গিয়ে মালিকদের কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়।

অনেক মালিক সংস্কার করতে গিয়ে এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সর বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের কারণে আজ সর্বস্বান্ত। এক সময়ের মালিক আজ জীবিকার তাগিদে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

আমার একটি পাঁচতলা বিল্ডিং সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলি, দু’টি ৮ তলা বিল্ডিংয়ের একটি করে ফ্লোর ভেঙে ফেলি। এমনকি একটি দোতলা বিল্ডিংয়ের একটি ফ্লোর ভেঙে ফেলি, সব মিলিয়ে ৪২ হাজার বর্গফুট বিল্ডিং ভাঙা হয়। এতে ১৮ কোটি টাকা লাগে।

এই সময় মনে হয়েছিল সমস্ত গার্মেন্টস ব্যবসা বন্ধ করে নিয়মিত কমার্শিয়াল সিনেমা (বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র) করি। কারণ এই দেড় বছর সময় প্রতিটা মিনিট কীভাবে কেটেছে তা সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। সে মুহূর্তগুলো বলেও আপনাদের বোঝাতে পারবো না।

অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্স আসার আগে অন্য একটি ব্র্যান্ড বায়ারের নির্দেশে সেফটিবোর্ড, ইলেকট্রিক, জকি পাম্পসহ অন্য খরচ বাবদ ৫ কোটি টাকা খরচ করি। কিন্তু অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্স আমাকে আবারও আগেরগুলো বাতিল করে নতুন করে ১০ কোটি টাকা খরচ করায়। এভাবেই বিপুল বিনিয়োগ করতে গিয়ে অনেকেই ব্যাংকঋণে জড়ান। এভাবে সংগ্রাম করতে করতে আজ মালিকরা নিঃস হয়ে পড়ছে। তারপরও আমরা (মালিকরা) অবিরাম চেষ্টা করছি এ সেক্টর বাঁচাতে।

আরও কিছু তথ্য দিতে চাই, ২০১৩ সালে একবারে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয় ৭০ শতাংশ, ২০১৮ সালে বেতন বাড়ে ৫০ শতাংশের বেশি। তাছাড়া প্রতিটি শ্রমিকের প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়ে। প্রতিটি বায়ার অর্ডার দেওয়ার আগে প্রতিটি শ্রমিকের নিয়মিত বেতন হচ্ছে কিনা, বেতন বাড়ানো হচ্ছে কিনা, শ্রম আইন ও বায়ারের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী হচ্ছে কিনা যাচাই-বাছাই করেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের মূল্য কিন্তু কখনও বাড়েনি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২০
ইএআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।