প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত রোববার (১৬ মে)। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলা গানের জীবনমুখী ঘরানার কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কবীর সুমন।
রোববার এক ভিডিওবার্তায় কবীর সুমন নতুন রাগটি গেয়ে শোনান। একইসঙ্গে আজাদ রহমান বেঁচে থাকতে তার সঙ্গে দেখা না হওয়ার আফসোসের কথাও জানান।
বর্তমানে বাংলা খেয়াল নিয়ে গবেষণা করছেন কবীর সুমন। সৃষ্টি করছেন নতুন নতুন রাগ। তারই ধারাবাহিকতায় এলো ‘রাগ আজাদ’।
আজাদ রহমান প্রসঙ্গে কবীর সুমন বলেন, ‘বাংলাদেশে যিনি বাংলা খেয়ালের প্রবর্তন করেন এবং বাংলা খেয়ালের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যান; সেই আজাদ রহমানের আজ (১৬ মে) প্রয়াণ দিসব। এক বছর আগে এই দিনে তিনি চলে গেছেন। আজাদ রহমানের নাম আমি শুনেছি, গান শুনেছি, রচনা শুনেছি, তার বাংলা খেয়াল রেকর্ডে শুনেছি, কিন্তু আলাপ হয়নি কোনোদিন। এ আমার সারাজীবনের আফসোস থেকে গেল। আমার এখন ৭৩ বছর চলছে। বন্ধুরা, আমার খুব ইচ্ছে করছিল একটা রাগ আমি তাকে উৎসর্গ করি। এর নামই দেবো ‘আজাদ’। ’
সুমন আরও বলেন, ‘আমার এক বান্ধবী স্বপ্না, আমাকে সাহায্য করেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ পণ্ডিত। মাথায় যখন কোনো স্কেল আসে, তিনি বইপত্র ঘেঁটে আমায় বলে দেন, আদৌ এটা ইউনিক স্কেল কিনা, এই স্কেলে ইতোমধ্যে কোনো রাগ আছে কিনা…। আমার মাথায় আজ একাধিক স্কেল আসে আজাদ রহমানের কথা ভেবেই। তার একটি হলো এরকম- ‘সা, কোমল রে, শুদ্ধ গা, তীব্র মা, পা, কোমল ধা, শুদ্ধ নি, সা। সা, শুদ্ধ নি, কোমল ধা, পা, তীব্র মা, শুদ্ধ গা, সা। অবরোহণে রে নেই। স্বপ্না নথিপত্র ঘেঁটে জানালেন এমন কোনো রাগ এখনো নেই। এই রাগটির নাম দিলাম ‘আজাদ’। ’
এরপর কবীর সুমন নিজের কণ্ঠে ‘রাগ আজাদ’ গেয়ে শোনান। ‘আজাদ রহমান/ বাংলা খেয়াল গান/ বাংলা ভাষার গানে/ খেয়াল তাকে টানে/ থেকে গেলেন তিনি বাংলায় বহমান/ বাংলাদেশের তিনি আজাদ রহমান’- তিন তালে এই বন্দিশ গেয়েছেন তিনি।
সবশেষে কবীর সুমন বলেন, ‘এই রাগ আজই সবিনয় এবং সগর্বে সৃষ্টি করেছি আমি। আমিও বাঙালি ছেলে, ‘রাগ আজাদ’ বাংলা খেয়াল। জয় বাংলা, জয় বাংলা ভাষা, জয় বাংলা খেয়াল, জয় আজাদ রহমান। জয় আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার, যারা বাংলা খেয়ালকে প্রথম সরকারি স্বীকৃতি জানিয়েছেন। ’
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আজাদ রহমান। তিনি ভারতের রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়ালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। আজাদ রহমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যান। তার উদ্যোগেই আট বছর ধরে বাংলা খেয়াল উৎসব হয়ে আসছিল।
১৯৬৩ সালে কলকাতায় ‘মিস প্রিয়ংবদা’র সংগীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে আজাদ রহমানের চলচ্চিত্রে আগমন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার সুর করা প্রথম চলচ্চিত্র বাবুল চৌধুরীর ‘আগন্তুক’।
আজাদ রহমানের সুর ও তার কণ্ঠে গাওয়া ‘এপার ওপার’ চলচ্চিত্রের ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ডুমুরের ফুল’- এর ‘কারো মনে ভক্তি মায়ে’, ‘দস্যু বনহুর’-এর ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’ গানগুলো সত্তরের দশকে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’র সুরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২১
জেআইএম