ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিশ্বসেরা সাত বসন্ত উৎসব

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
বিশ্বসেরা সাত বসন্ত উৎসব

ঢাকা: মহাসমারোহে এসে গেল বসন্তদিন। বাঙালির অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো পহেলা ফাল্গুন।

বসন্ত মানেই তো উৎসব। দেশ, কাল ও ঐতিহ্যভেদে উৎসবও হয় ভিন্ন ভিন্ন। তবে বসন্ত ছুঁয়ে যায় পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। আর সেই সঙ্গে দিকে দিকে বসন্তের উৎসবও রূপ পাল্টায়।

বিশ্বের প্রতিটি দেশে বসন্ত পালিত হয় অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। প্রতিটি জাতিই সারাবছর অপেক্ষা করে রঙিন এ ঋতুর জন্য।
 
বসন্তদিনে আমরা পরিচিত হবো সাতটি দেশের বসন্ত উৎসবের সঙ্গে। দেখবো তাদের বসন্তের সাজ, আনন্দঘন মুহূর্ত ও উৎসবের ধারা।

সংক্রান উৎসব, থাইল্যান্ড

থাই নববর্ষের প্রথম দিনে সংক্রান উৎসবটি পালিত হয়। সময়টা ইংরেজি মাস এপ্রিলের মাঝামাঝি। এদিন থাইল্যান্ডের অধিবাসীরা মেতে ওঠে জলকেলি খেলায় । তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ উৎসবটি থাইদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। জলকেলি খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নতুন বছরে পা রাখা। এদিন থাইল্যান্ডের অধিবাসীরা পরিবার, প্রতিবেশী ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ছোটরা সৌভাগ্য ও কল্যাণ কামনা করে সুগন্ধিযুক্ত পানি বড়দের হাতে দেয়। এছাড়াও তারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য খাবার রান্না করে মঠে নিয়ে যায় ও গৌতম বুদ্ধের মূতির্কে অতি যত্নের সঙ্গে স্নান করায়। সেদিন তারা রাস্তার উপর একে অন্যের দিকে পানি ছুঁড়ে জলকেলি খেলায় মেতে ওঠে। দীর্ঘ তিনমাস শীতের পর বসন্তের এ দিনে থাইদের কাজ একটাই, বসন্তের নতুন দিনকে বরণ করতে পিচকারি আর জল নিয়ে তৈরি হওয়া।

দোল, ভারত

দোল উৎসবের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। দোলযাত্রা একটি বৈষ্ণব উৎসব। এটি বহির্বঙ্গে হোলি নামে পরিচিত। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে বসন্তের রঙে রঙে সবাইকে রাঙিয়ে দিতেই আসে দোল। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব পালিত হয়।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এদিন শ্রীকৃষ্ণ তার গোপীদের সঙ্গে দোল খেলায় মেতে উঠতেন। সেই থেকে বৈষ্ণবরাসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সব অশুভ শক্তির বিনাশ কামনায় দোল খেলে। সেদিন একে অপরের গালে আবির মেখে শুভকামনা জানায়। যেকোনো উৎসবেই আয়োজন করা হয় মজাদার খাবার-দাবারের। দোলও এর ব্যতিক্রম নয়। এদিন মিষ্টি, দইয়ের পাশাপাশি আরও থাকে মাঠা ও ভাং এর আয়োজন।

চেরি ফুল উৎসব, জাপান

বসন্ত মানেই আনন্দ, ঘুরে বেড়ানো আর খাওয়া-দাওয়া। তাই প্রতি বসন্তেই জাপানিরা চেরি বাগানে পিকনিক করে। বহুদিন ধরেই এটি তাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাপানে বসন্ত খুব সহজেই নজর কাড়ে। যেন হঠাৎ করেই প্রকৃতিতে লাগে রঙের ছোঁয়া। তাই এ ঋতুটি তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। চেরি ফুল উৎসবকে তারা সাকুরা নামে ডাকে। তারা পুরো বসন্ত ঋতুজুড়ে উৎসব আর পিকনিকে মেতে থাকে। সেসময় জাপানি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পানীয়ের আয়োজন করা হয়। এসময় গাছের নিচে জড়ো হয়ে সবাই খাওয়া-দাওয়ায় মেতে ওঠে। গাছের নিচে জড়ো হয়ে এ আয়েশি ভোজের নাম হানামি। হানামিতে অংশ নেয়নি এমন জাপানি নেই বললেই চলে।

লাস ফালেস, স্পেন

সময়টা বসন্ত। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় গেলে দেখা যাবে, অসাধারণ ফায়ার ওয়ার্ক। উৎসবটির নাম লাস ফালেস। এটি তাদের বসন্তের উৎসব। মা মেরির স্বামী সেইন্ট স্টিফেন জোসেফের স্মরণে তারা সেদিন ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালন করে। সেদিন শহরের প্রতিটি সেন্টারের পাশে কাগজ, কাঠ ও মোমের সমন্বয়ে তৈরি বড় বড় পাপেট সাজানো হয়। এ পাপেটগুলোর নামই মূলত ফালেস। ফালেস বিভিন্ন চরিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য! একদিকে ফালেসের রহস্যময় চেহারা আর ঠিক তাদের চারপাশেই জ্বলছে কমলারঙা আগুন। সে আগুন ছুঁই ছুঁই করেও যেন ছুঁতে পারছে না তাদের। প্রতিটি এলাকার অধিবাসীরা দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে এ ফালেসগুলো তৈরি করেন। যার খরচ দশ হাজার ডলারেরও বেশি। লাস ফালেস শুরু হয় নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে থেকে। ১ মার্চ থেকে নাচ, গান, সাজসজ্জা, প্যারেড ও রান্নাবান্না কোনো কিছুরই কমতি থাকে না সে দিনটিতে। এভাবে চলে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত। এ উৎসবে আতশবাজির ঝলকানিতে জেগে থাকে স্প্যানিশ রাতগুলো।

চায়নিজ বসন্ত

চীনের নববর্ষ আর বসন্ত দু’টোরই আগমন হয় একই সময়ে। বিশাল ভোজ, পথঘাট সাজসজ্জার পাশাপাশি দেশটির অধিবাসীরা নতুন সাজে নিজেদের সাজিয়ে নিতে ভোলেন না। তাদের বসন্ত উৎসব শুরু হয় ২২ জানুয়ারি আর শেষ হয় ২৮ তারিখে। দীর্ঘদিন জমজমাট বসন্ত পালনের পর যে যার স্থানে ফিরে যান। একে বলা হয় চুনইয়ুন।

আলেকজান্দ্রা, নিউজিল্যান্ড

গত ৫০ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের আলেকজান্দ্রা শহরে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে। আলেকজান্দ্রা উৎসবটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শুরু হয়। এতে বিভিন্ন অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতা যেমন- নৌকাবাইচ, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আরও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইডে চড়ার সুযোগ।

ফেরিয়া নাসিওনাল ডি সান মার্কোস, মেক্সিকো

সান মার্কোস মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় উৎসব। এ দিনটিতে মেক্সিকোতে সমাগম হয় প্রায় ৭০ লাখ মানুষের। মোরগ লড়াই থেকে শুরু করে সুন্দরী প্রতিযোগিতা, কী নেই সে আয়োজনে! এপ্রিলের ১৪ তারিখে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানটি চলে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। মেক্সিকোর আগুয়াস্কালিয়েন্টেসে অনুষ্ঠিত হয় সান মার্কোস উৎসবটি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।