আচ্ছা স্বর্গ দেখতে কেমন? একটা ভূখণ্ড? তার চারপাশে নেই কোনো বাঁধ, যেন আকাশে ভাসছে। চারপাশে স্বচ্ছ ফোয়ারা।
স্বর্গ নরক পৃথিবীতেই- সেকথা কবি বলে গেছেন অনেক আগেই। পৃথিবীতে সত্যিই স্বর্গ-নরক রয়েছে! এমনই একটি স্বর্গের মতো জায়গা রয়েছে ব্রাজিলে। ভেনেজুয়েলা বর্ডারের সমতল চূড়ার পর্বত রোরাইমা।
দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড উপন্যাসটি যারা পড়েছেন তাদের কাছে ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়।
এবছর প্রায় হাজারখানেক পর্বতারোহী সেখানে জড়ো হয়েছেন। উদ্দেশ্য? সেতো জানা কথা। রূপকথার মতো অভাবনীয় এই জায়গাটির রহস্য গায়ে মেখে শীর্ষে ওঠার।
তবে, প্রায় ৯ হাজার ২শ’ ফুট উঁচু পাহাড়ে ওঠা কি আর চারটিখানি কথা!
জায়গাটি অতি নির্জন বলে জানান ফেলিক্স মেডিনা। ৫৯ বছর বয়সী মেডিনা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেখানে পর্বতারোহীদের আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত। তাদের প্রয়োজনীয় পথ নির্দেষও দিচ্ছেন তিনি।
প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ এখানে আসা যাওয়া করেন। তাই পর্বতারোহণের সময় লম্বা লাইন পড়ে যায়। বিশেষ করে বড়দিন ও ইস্টারের সময় এমন হয়। এখানে থাকার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তাঁবু ব্যবহৃত হয়।
কখনওবা বিলাসী পর্যটকরা হেলিকপ্টার নিয়ে হাজির হন। বিশেষ করে যারা জাপান থেকে আসেন তারা।
পেমন ভাষা অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব ভেনেজুয়েলার সমতল চূড়ার পাহাড়কে টেপিস বলে। টেপিস অর্থ ঈশ্বরের বাড়ি। ভেনেজুয়েলাবাসীদের পেমন বলা হয়। আর তাদের ভাষা
হলো পেমন ।
রোরাইমার পাশের পর্বতটির নাম কুকিনান এবং এরপরে আছে তেপুই। এই পর্বতগুলো পেমনদের কাছে কুখ্যাত। কারণ তাদের পূর্বপুরুষদের অনেকেই এসব পর্বত থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এসব পাহাড়ের গঠন অতি প্রাচীন। আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের ভূমি পৃথক হয়ে যাওয়ার পর রোরাইমার বিশাল অদ্ভুত মালভূমির সৃষ্টি হয়।
দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড চলচিত্রের একটি দৃশ্য।
১৯১২ সালে ব্রিটিশ লেখক কোনান ডোয়েলের বিখ্যাত উপন্যাস দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ডে ডাইসররা অভিযাত্রীদের ঠিক এই স্থানটিতেই হামলা করেছিল। ১৯৬০ সালে আরউইন অ্যালেন উপন্যাসটিকে বড়পর্দায় রূপান্তর করেন।
এখনকার পর্যটকরা ডাইনোসরদের কবলে না পড়লেও অহরহই দেখছেন রোরাইমার ভিন্নধর্মী কালোব্যাঙ, ফড়িং ও বিষাক্ত মাকড়শা। তবে ভূতুড়ে এই জায়গাটি পাখিবিশেষজ্ঞদের জন্য স্বর্গ বলতে পারেন।
ভেনেজুয়েলা বংশদ্ভূত ক্রিস্টিনা সিতজা পেশায় শিশুদের বই অঙ্কনশিল্পী। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি নিজ দেশের বাইরে থেকেছেন। ছেলেবেলা থেকে রোরাইমার গল্প শুনে এলেও সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবছর সব কল্পনাকে অতীত করে আরোহণ করলেন রোরাইমা।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ৪২ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা জানান, অভিজ্ঞতাটি ছিল অসাধারণ। আবার কষ্টেরও।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫