ঢাকা: মেয়েটির নাম সেইডি রান্সি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিচয় হয় জেসন রান্সির সঙ্গে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন যন্ত্রণাদায়ক পেটে ব্যথায়। এক পর্যায় ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠায় ডাক্তারের কাছে যান পরীক্ষা করাতে। পরীক্ষায় দেখা যায়, তার ডিম্বাশয়ে বেড়ে উঠেছে তরমুজের মতো বড় একটি টিউমার।
অনেক বছর ধরেই পেটে ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এগুলো মূলত ইরিটেবল বৌল সিনড্রমের লক্ষ্মণ। প্রায় পেটে ব্যথা দেখা দেওয়ায় তিনি গুগলে সার্চ করেন বিষয়টি বোঝার জন্য। দেখলেন, এটি মূলত ওভারিয়ান অর্থাৎ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষ্মণ।
কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি তিনি। আর সবচেয়ে চমৎকার বিষয় এই, জেসন নামের অসাধারণ যুবকটিও সেইডির ক্যান্সারের কথা শুনে দমে যাননি। হারিয়ে যায়নি সেইডির প্রতি তার ভালোবাসা।
সেইডিকে প্রায় অবাক করেই জেসন গত বছর জুনে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন জেসন। ঠিক তার পরের মাসেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বন্ধু ও পারিবারিক পরিবেশে জমজমাট বিয়ের আসরে নিজেদের আপন করে নেন সেইডি ও জেসন।
নিজের স্বামী প্রসঙ্গে সেইডির বক্তব্য, মানুষ হিসেবে জেসনের তুলনা নেই। সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর খুশিতে আমার চোখে জল চলে এসেছিল। আমার বিয়ের দিনটি ছিল জীবনের সবচাইতে আনন্দের দিন।
রেইন্স ও জেসন ছয়মাস অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। সেখানে উইনচস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে দু’জনেই লাভ করেন স্নাতক ডিগ্রি। সেসময় থেকেই সেইডি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় তার চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা। শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে।
২০১৩ তারা ফিরে আসেন লন্ডনে। মেখানে মার্সডেন হাসপাতালে পাঁচবার তার সার্জারি করা হয়। সেসময় তার ব্যথা বেড়ে তিনগুন হয়ে যায়। এমন অবস্থা যে, কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ানোও তার জন্য ছিল কষ্টসাধ্য। সেইডিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেবছরই সেপ্টেম্বরে ডাক্তার তার রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
গত বছর জানুয়ারিতে ডাক্তাররা অপারেশনের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু টিউমারটি ভেতরে এমনভাবে লেগে গেছে যে তা পুরোপুরি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তার অন্ত্র, যকৃত, ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে।
ডাক্তাররা তাকে জানিয়ে দেয়, তিনি সর্বোচ্চ এক থেকে দুই বছর বাঁচবেন। তবে ২৩ বছর বয়সী সাহসী এ নারী কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। যা তার টিউমারকে প্রসারণের হাত থেকে বাঁচাবে।
লন্ডনের ব্রোমলি কেন্টবাসী সেইডি জানান, ওভারিয়ান ক্যান্সার ৫০ বছরের নিচের মেয়েদের সচরাচর হয় না। কিন্তু এ রোগের নয়টি লক্ষ্মণের মধ্যে আটটিই আমার রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমি যখন আমার মাকে এসব বলি, তখন মা আমাকে বোঝাতে শুরু করেন, বোকার মতো কথা বোলো না। তোমার ক্যান্সার হয়নি!
অসুস্থতার কারণে সেইডির চুল ফেলে দিতে হয়েছে কিন্তু স্বামী জেসন তাকে প্রশংসা করতে ভোলেননি, চুল ছাড়াই তোমাকে চমৎকার লাগছে!
এদিকে জেসন সপ্তাহে একদিন সুপারমার্কেটে কাজ করেন। আর বাকিটা সময় স্ত্রীর পাশেই কাটান। তারা নিজেদের সময়গুলোকে যথাসম্ভব সুন্দর করার চেষ্টাই করছেন সবসময়।
জেসন বলেন, সেইডি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে অসাধারণ নারী। সে সব প্রতিকূল অবস্থাতেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সক্ষম। তাকে প্রথমবার দেখে আমার মনেই হয়নি, বিয়ের পর সেই হবে আমার একমাত্র পৃথিবী!
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫