ঢাকা: তুমি বরং কুকুর পোষো, প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লার একটি কবিতার প্রথম দুটি চরণ। আসলে প্রাণীদের মধ্যে কুকুর খুবই প্রভুভক্ত।
তবে চীনের এ খবরটি এক্কেবারে ভিরমি খাওয়ার মতোই। ভালোবাসা প্রদর্শনের চেয়েও আরও বেশি কিছু। দেশটির ওয়েনিন প্রদেশের শ্যাংকসি অঞ্চলের পাঁচ বৃদ্ধা মোটমাট তেরোশ’ কুকুর পেলে পুষে বড় করেছেন। যত্নআত্তি করছেন, নিয়মিত তাদের খাইয়ে দিচ্ছেন। তাও রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো নিরাশ্রয়ী কুকুর।
একসঙ্গে এত কুকুরের খাবার জোটানো সহজ সাধ্য নয়। তারপর তাদের খাইয়ে দেয়া তো আরও কঠিন। কামড়ে দেয়ার ভয় তো আছেই। এতসব ভয়ডর পাত্তা না দিয়েই কুকুরগুলোকে খাওয়াতে পাঁচ স্বেচ্ছাসেবী মিলে প্রতিদিন প্রায় আটশ’ আশি পাউন্ড খাবার প্রস্তুত করেন। ছবিতে দেখা যায়, কুকুরগুলো অধীর আগ্রহে খাবারের জন্যে অপেক্ষা করছে। খাবার এলেই পড়ছে হুমড়ি খেয়ে।
স্বেচ্ছাসেবী ওয়েং জানান, অন্য চারজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই তেরোশ’ কুকুরের শেষ লহমা খাবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। এত পরিশ্রমের পরেও এই জীবনরক্ষাকারী কাজ থেকে তারা বিরত হননি। এমনকি কেউ তাদের নিরুৎসাহিত করতেও পারেনি।
তিনি আরও জানান, তারা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুর উদ্ধার করে পেলে-পুষে বড় করছেন। গেল ছয় বছর ধরে তারা করে যাচ্ছেন এই কাজ। যদিও এই কাজে বিভিন্ন দাতা সংগঠন তাদের সহায়তা করছে।
এই পাঁচ স্বেচ্ছাসেবী বৃদ্ধার বয়স ষাট থেকে সত্তর বছরের মধ্যে। কুকুরের খাবার তৈরি করতে প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠতে হয় তাদের। শত ক্লান্তিতেও তারা এই বিপুল সংখ্যক কুকুরের সেবা-যত্নে অবহেলা করেন না। খুব ধৈর্য নিয়ে তাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটান। এ যেন আরবের সেই তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাইয়ে স্বর্গে যাওয়ার মতো অবস্থা।
দেশটিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুর ধরে নিয়ে মেরে ফেলে। এমন দৃশ্য দেখে ষাট বছরের ওয়াং ইয়ানফ্যাংকের নিরাশ্রয়ী কুকুরের প্রতি মায়া জন্ম নেয়। এরপর ২০০৯ সালে সরকারের অনুমতি তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন কুকুর আশ্রয় কেন্দ্র। মানুষের আর্থিক সহায়তা নিয়ে এটি পরিচালনা করছেন।
এত ভালো কাজের পরেও বিভিন্ন সময় কুকুরের কামড় খেতে হয়েছে তাদের। যে হাত দিয়ে তারা খাইয়ে দেন, অনেক সময় সেই হাতেই কামড় বসিয়ে দেয় এই অবলা প্রাণী। তারপরেও ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে’ ভেবে নিজের কাজ অবিশ্রান্ত করে যাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৫