ঢাকা: ‘ওরে গৃহবাসী খোল, দ্বার খোল, লাগল যে দোল। ’ আক্ষরিক অর্থেই রবিঠাকুরের গানের মতো বছর ঘুরে আবার এলো রঙিন দিন।
আকাশে ফাল্গুনি পূর্ণিমা। জোছনা ভেজানো উঠোন। চারদিকে রঙের ছটা আর সবার মনে উৎসব রব।
দোলযাত্রা একটি বৈষ্ণব উৎসব। ফাল্গুনি পূর্ণিমার এ দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
দোল বসন্ত উৎসব বা রঙের উৎসব নামেও পরিচিত। শীতের পর পাতাঝরা গাছের শাখে শাখে যখন নতুন পাতা গজায়, আসে ফুলের মুকুল, তখন বসন্ত বাতাস ফের পুনরুজ্জীবিত করে প্রতিটি সকাল। তখনই বসন্তরাজকে স্বাগত জানাতে আসে দোলের আয়োজন।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ফাল্গুনি পূর্ণিমার দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধা ও গোপীদের সঙ্গে দোল খেলায় মেতে উঠতেন। সেই থেকে ফাল্গুনি পূর্ণিমার দিন দোল খেলা হয়। এদিন বৈষ্ণবসহ অন্যান্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একে অপরের গালে আবির মেখে সাধুবাদ জানান। সব অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে জীবনে রঙ ফিরিয়ে আনার প্রয়াসেই দোল খেলা হয়। এদিন একই সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার দেবমূর্তি পরিশুদ্ধ করে আবির মেখে আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রার। এটিই মূলত দোলযাত্রা। একে শ্রীকৃষ্ণের শোভাযাত্রাও বলে।
এদিন সবাই আবির, রঙ ও পিচকারি নিয়ে রঙ খেলায় মেতে ওঠেন। এটি এমন এক উৎসব যেখানে সবাই এক। চেনা-অচেনা, বন্ধু, পরিবার, স্বজন, ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই এক সঙ্গে একই পরিসরে অংশ নেন। সাধারণত চওড়া রাস্তা, খোলা মাঠ, পার্ক ও মন্দিরে দোল খেলা হয়। শুধু রঙ খেলাই নয়, এদিন আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
ভারতীয় উপমহাদেশের উৎসব বলে কথা! নানা রকম মিষ্টি, দই ও পানীয় তো রয়েছেই। এসব পানীয়ের মধ্যে লাচ্ছি ও ভাং অন্যতম।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতিবছরই দোলযাত্রার তারিখে রথবদল হয়। সাধারনত ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বা মার্চের শুরুতে দোলের তারিখ পড়ে। এবছর দোলের দিন পড়েছে ০৫ মার্চ।
বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সনাতনধর্মীয় সম্প্রদায়ের দোল উৎসব সব সাম্প্রদায়িকতা ছাপিয়ে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে। দোল বহির্বঙ্গ তথা উত্তর ভারতে হোলি নামে পরিচিত। বর্তমানে বসন্ত উৎসব হিসেবে দোল দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়ও বেশ জাকজমকভাবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫