মাত্র আট বছরের ছোট্ট মেয়ে শিশু গ্যাবি ম্যান। কি বলে পরিচয় দেবো তার? পাখিপ্রেমী নাকি পাখিরা গ্যাবিপ্রেমী! পাখির প্রতি অনেকেরই আছে গভীর ভালোবাসা।
পাখি কমবেশি সবার পছন্দ হলেও তার মধ্যে কাক মোটেও পড়ে না। কাক তার আচরণ বা গলার স্বর কোনোটা দিয়েই যেন মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে পারেনি এতকাল। তবে গ্যাবির কি হলো?
গ্যাবির সঙ্গে পাড়ার সব কাকেরই বন্ধুত্ব। বন্ধু মানেই তো একে অপরের জন্য থাকবে অসীম মমতা। আর তাই রোজ সকালে গ্যাবি বাড়ির পেছনের উঠোনে কাকদের গোসলের জন্য স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি আর খাওয়ার জন্য মজাদার বাদাম দেয়। এখানেই শেষ নয়। গ্যাবি মুঠোভরে ডগফুড ছড়িয়ে দেয় ঘাসের ওপর। কাজ হয়ে এলে গ্যাবি আশেপাশের কাকগুলোকে ডাকে খাবার খাওয়ার জন্য।
কাক মজাদার ভোজ শেষ করে যে শুধু উড়ে গেল তা কিন্তু নয়। নিমন্ত্রণে এলে কি কেউ খালি হাতে আসে নাকি! তারাও গ্যাবির জন্য ঠোঁটে করে এটা ওটা উপহার নিয়ে আসে! এই যেমন ভাঙা কাঁচের টুকরো, ছোট রূপালি বল, কালো ও হলুদ বোতাম, কাগজের ক্লিপ, ফোম আরও কত কি!
কাকদের দেওয়া এসব উপহার পেয়ে গ্যাবিও ভীষণ খুশি। সে যত্ন করে সেগুলোকে সংরক্ষণ করছে। খাবার টেবিলের ওপর রাখা একটি বাক্সে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রাখা হয়েছে এসব উপহার। তবে দর্শকদের অতি আগ্রহে উপহারগুলো দেখালেও সেগুলো স্পর্শ করার ব্যাপরে কঠিন নিয়ম আরোপ করেছে মিষ্টি এই মেয়েটি।
গ্যাবির মূল্যবান এই বাক্সের ভেতরে রয়েছে সারি সারি স্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগ ও কৌটা। প্রতিটির ওপর উপহার পাওয়ার সময়, তারিখ ও সাল উল্লেখ রয়েছে। এসব উপকার ছোট্ট গ্যাবির কাছে সোনার চেয়ে মূল্যবান। তবে উপহারগুলোর মধ্যে গ্যাবির কিছু বিশেষ পছন্দ আছে। যেমন পার্ল রঙের হার্টশেপ তার খুব পছন্দের। হতে পারে এটি লকেট বা কানের দুলের অংশ বিশেষ, কিন্তু এ সম্পর্কে গ্যাবির উক্তি- এই পার্লটিই বলে দেয় যে ওরা আমাকে কত ভালোবাসে।
কাকদের সঙ্গে গ্যাবির বন্ধুত্ব ২০১১ সাল থেকে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। গল্পটা বেশ চমকপ্রদ।
একবার গ্যাবি গাড়ি থেকে বরে হওয়ার সময় তার কোলের ওপর রাখা চিকেন নাগেট মাটিতে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই আশেপাশের সব কাক ভিড় জমালো চিকেন নাগেটটি লুফে নিতে। এরপর থেকেই তারা গ্যাবির আশেপাশেই থাকে। যদি আরেকবার চিকেন নাগেট ভোজের সুযোগ হয়।
গ্যাবি যত বড় হতে লাগলো তারও মায়া হয়ে লাগলো কাকদের প্রতি। বাসস্টপে দাঁড়িয়ে নিজের লাঞ্চপ্যাক আশেপাশে ছড়িয়ে দিত। আর কাকেরাও রোজ গ্যাবির অপেক্ষায় বাসস্টপে এসে হাজির হতো। ২০১৩ সাল থেকে গ্যাবি ও তার মা লিসা দৈনিক রুটিন মেনেই কাকদের খাবার দিতে শুরু করেন।
মার্জলাফ ও তার সহকর্মী মার্ক মিলার কাকের ওপর করা একটি গবেষণার ফল হিসেবে জানান, কাকদের যারা খাবার দেন তাদের সঙ্গে কাকদের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা একে অপরের সংকেত খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে।
তারা আরও জানান, পাখিরা তাদের ওড়ার ভঙ্গি, দূরত্ব ও বসার স্থান দ্বারা তাদের ইতিবাচক সংকেত দেয়। অনেক সময় কাক তাদের খাদ্য সেবা দানকারীদের জন্য উপহারও নিয়ে আসে।
গ্যাবির মা লিসা প্রতিদিনই কাকদের ছবি তুলে রাখেন ও তাদের আচরণ কেমন তা বিশ্লেষণের জন্য একটি চার্টও তৈরি করেছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো যে কিছুদিন আগে লিসা ছবি তোলার সময় লেন্সের ক্যাপ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তা খোঁজার সময় দেখলেন যে পালকহীন একটা ঈগল তাদের বাড়ির আশপাশ দিওয়েই উড়ে বেড়াচ্ছে। কি এবার তবে ঈগলের পালা!
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫