ঢাকা: বিস্ময়ে ভরা এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্যই সৃষ্টি হয়নি। এখানে সর্বত্র জীবন খুঁজে পাওয়া যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এই বিস্ময়কর স্থানটি ‘শয়তানের ত্রিভূজ’ নামেই বেশি পরিচিত। প্রচলিত আছে, এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক সামুদ্রিক জাহাজ, প্লেন বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়ার পর আর ওইসব জাহাজ, প্লেন কিংবা তাদের যাত্রীদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আটলান্টিক মহাসাগরে বারমুডা, ফ্লোরিডা ও পুয়ের্তোরিকোকে তিনটি বিন্দু ধরে কল্পনা করা এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সাধারণ মানুষ থেকে বিজ্ঞানী, প্রায় সবার কাছেই একটা বিস্ময়।
১৯৬৪ সালে ভিনসেন্ট গ্যাডিস সর্বপ্রথম ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামটা ব্যবহার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহিত্যপত্রিকা ‘আর্গসি’তে তিনি এ নিয়ে একটা প্রতিবেদন লেখেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ামাত্র তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে। তখন থেকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিভিন্ন রহস্য খুঁজতে উঠেপড়ে লাগেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ভিনসেন্টের লেখা জনপ্রিয় হওয়ার পর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন পরবর্তী লেখকরাও। জন্ম হয় বিভিন্ন গল্পের, মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় আগ্রহ আর ভীতির। তবে লেখকরা যাই লিখে থাকুন নিজ নিজ গল্পে, বিজ্ঞানীরা তার কোনো উত্তরই খুঁজে পাননি আজ পর্যন্ত।
সবশেষে, পরিচালিত অভিযানে কোনো তথ্যই উদ্ধার করতে না পেরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বলে কোনোকিছুরই অস্তিত্ব নেই বলে জানায় মার্কিন নৌবাহিনী। এমনকি ‘ইউএস বোর্ড অন জিওমেট্রিক নেমস’ও এই নামে কোনো অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৩ সালে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ জাহাজ চলাচলে বিশ্বের ১০টি বিপজ্জনক সামুদ্রিক এলাকা চিহ্নিত করে, যার মধ্যেও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নাম নেই।
এরপরও লেখকদের উল্লিখিত এলাকায় যে সব দুর্ঘটনা বা জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায় মানুষের মনে।
পামুক্কালে
বারমুডার পর পৃথিবীর বুকে অপর অদ্ভুত জায়গার নাম পামুক্কালে। তুরস্কের এই ঝর্ণাধারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পর্যটক আকর্ষী একটা জায়গা। তবে এই অসম্ভব সুন্দর অদ্ভুত জায়গাটির জন্ম কীভাবে হয়েছে, তার কোনো সুস্পষ্ট ইতিহাস মানুষের জানা নেই।
তুর্কি শব্দ ‘পামুক্কালে’ অর্থ ‘তুলার দুর্গ’। দুধসাদা হওয়ার কারণেই খুব সম্ভবত এমন নামকরণ। পামুক্কালের দৈর্ঘ দুই হাজার সাতশ’ মিটার, প্রস্থ ছয়শ’ মিটার ও উচ্চতা ১৬০ মিটার।
প্রচলিত আছে, হাজার বছর আগে তুরস্কের যে স্থানে পামুক্কালে অবস্থিত, সেখানে একের পর এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়। ফলে এই অঞ্চল উষ্ণ হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে এখানে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। পরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশ্রিত জলের ঝর্ণাধারার জন্ম হয়। আস্তে আস্তে ঝর্ণাজলে ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমতে শুরু করে। এগুলো জমেই এখানে সোপানের জন্ম হয়েছে বলে প্রচলিত গল্পে জানা যায়।
দুধসাদা এই ঝর্ণাধারা বর্তমানে ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।
সোকত্রা দ্বীপ
ইয়েমেনের সোকত্রা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপের উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ পর্যবেক্ষণ করে যে কেউ বলবে, এটি আসলেই পৃথিবীর কোনো অংশ নয়। হয়তো অন্য কোনো পৃথিবী থেকে খুলে পৃথিবীতে এসে পড়া একটি ভূখণ্ড। এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেকে তো দাবিই করে বসেন, এটি আসলে স্বর্গেরই খুলে পড়া ছোট্ট একটা অংশ।
সোকত্রার জীববৈচিত্র্য খুবই বিচিত্র। সর্বত্র সুগন্ধে ভরা এই দ্বীপ যে কারো পক্ষেই ছুটি কাটানোর প্রিয় একটি স্থান হতে পারে।
ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে এই দ্বীপের জন্ম। এখানে প্রাণিজগতের প্রায় নয়শ’ প্রজাতির বাস। তবে অবাক ব্যাপারটি হলো, এই নয়শ’ প্রজাতির বেশিরভাগই সোকত্রা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না।
এখানের একটি উদ্ভিতের নাম ‘ড্রাগন’স ব্লাড’ বা ড্রাগনের রক্ত। ক্রিস্টাল পদার্থ তৈরিতে এই উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা মরুভূমির গোলাপ, যা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আরো আছে এলিফ্যান্টস লেগ বা হাতীর পা।
বেলিজ ব্লু হোল
মধ্য আমেরিকার বেলিজে অবস্থিত সাগরতলের এই গহ্বর ডুবুরি ও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে দারুণ এক বিস্ময়। সেই সঙ্গে এর অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করে যেকোনো মানুষকে।
ব্লু হোলের নামকরণের পেছনে এর বৃত্তাকার আকৃতিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রায় তিনশ’ মিটারজুড়ে এই গহ্বরের গভীরতা প্রায় ১২৪ মিটার। ধারণা করা হয়, প্লাইস্টোসিন যুগে হিমবাহ থেকে এই গহ্বরের উৎপত্তি। সে সময় সাগরতলের উচ্চতা ছিল অনেক কম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তত দেড় লাখ বছর আগে এই গহ্বর সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন সময়ে এর পরিবর্তন আসে, সাগরতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ।
ডুবুরি ও বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে ব্লু হোলের ভেতর এখন পর্যন্ত অনেক নতুন প্রজাতির প্রানি ও উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ভেতরের অসংখ্য চুনাপাথরের খাম ও ঝুলন্ত দন্ড এই গহ্বরকে আরো বিস্ময়ে ভরে দিয়েছে।
আফ্রিকার চোখ
উত্তর আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় সাহারা মরুভূমিতে এই বৃত্ত আফ্রিকার চোখ বলে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এটি সাহারার চোখ বলেও অনেকের কাছে পরিচিত। তবে খালিচোখে দেখলে বা কাছে থেকে দেখলে এই বৃত্ত কারোর নজরে পড়বে না। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমেই প্রথম এই অঞ্চল বিজ্ঞানীদের নজরে পড়ে।
কীভাবে এই অঞ্চলের উৎপত্তি হল, তা নিয়ে সকল মহলেই বড় ধরণের প্রশ্ন রয়ে গেছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী মনে করেন, হাজার বছর আগে পারমাণবিক বিস্ফোরণের কারণেই এমন বৃত্তের উদ্ভব।
গভীরভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত, হালকা উপবৃত্তাকার এই আফ্রিকার চোখের ব্যাস প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এর ভেতরে ও বাহিরের গঠনপ্রকৃতি ভিন্ন। ভেতরের দিকে এটি আগ্নেয় শিলা, কার্বনাইট ও কিম্বারলাইট পাথর দিয়ে গঠিত। আর বাইরের দিকের বেশিরভাগই কার্বনাইট ও কিম্বারলাইটের পাথর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই কার্বনাইট ও কিম্বারলাইট পাথরগুলো অন্তত একশ’ কোটি বছর আগের। এই হিসাবে হাজার বছর আগের পারমাণবিক বিস্ফোরণের তত্ত্ব কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫