জাতি হিসেবে বৃটিশরা প্রথা বা কনভেনশনের প্রচণ্ড অনুরাগী। কেউ কেউ বলেন, ‘প্রথার দাস’।
রাজতন্ত্রের প্রতি, বিশেষভাবে ব্রিটেনের রানির প্রতি, বৃটিশ জনগণের শ্রদ্ধা-ভক্তির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কেননা রানি ও রাজাকে তারা গণ্য করে থাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা ঈশ্বরের মর্ত্যরূপ হিসেবে। মধ্যযুগ থেকে আজ অব্দি চলে আসছে এমনধারা প্রথা ও আচার। তাই বৃটিশ শাসনতন্ত্রে একইসঙ্গে দ্ব্যর্থকভাবে বলা হয়, ‘দ্য কিং ইজ ডেড; লং লিভ দ্য কিং’। ব্যক্তি রাজার মৃত্যু হলেও রাজতন্ত্র চিরজীবী।
এবার মান্ধাতা আমলের এহেন রক্ষণশীল ধারণার মূলে কুঠারাঘাত হানতে যাচ্ছেন ব্রিটেনে ‘নতুনের দূত’ বলে পরিচিত হয়ে ওঠা লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাকিংহ্যাম প্রাসাদে শপথ নেবার দিনটিতে প্রথা ভাঙবেন। কি সেই প্রথা?
শপথ নেবার সময় সবাইকে রানির সামনে হাঁটু মুড়ে বসে রানীর হস্ত চুম্বন (আসলে রানির হাতের আংটিটায়) করতে হয়----এটাই প্রথা। কিন্তু করবিন বাকিংহ্যাম প্রাসাদকে জানিয়ে দিয়েছেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে তিনি রানির সামনে হাঁটু মুড়ে বসতে পারবেন না। পত্রিকাগুলো এখবর ফলাও করে প্রচার করেছে। একটি পত্রিকার শিরোনাম: ‘Jeremy Corbyn will 'not need to kneel' before the Queen at Buckingham Palace.’
বাকিংহ্যাম প্রাসাদ এমন বিব্রতকর অবস্থায় এর আগে কখনো পড়েনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে এমন প্রথাভাঙা নাছোড়বান্দারও আবির্ভাব ঘটেনি কখনো। বাকিংহ্যাম প্রাসাদ এটা ভালো করেই জানে, করবিন বড় কঠিন স্বভাবের মানুষ। ভাঙবেন কিন্তু মচকাবেন না। তাকে তার প্রতিজ্ঞা থেকে একচুল নড়াবার সাধ্যি কারোরই নেই। রাজপ্রাসাদও যদি বেঁকে বসে তাহলে এর পরিণতি হবে সাংবিধানিক সঙ্কট।
এমনটা হোক রাজপ্রাসাদ কখনোই চায় না। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে, প্রাসাদের তরফ থেকে করবিনকে জানানো হয়েছে, তিনি যদি একান্তই না চান তাহলে রানির সামনে হাঁটু গেড়ে তাকে বসতে হবে না। তবে রানির হস্তচুম্বনটা যেন অন্তত করেন তিনি। দেখা যাক, আগামী বুধবার জেরেমি করবিন কি করেন। সেই পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা!
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
জেএম