নুহাশপল্লী থেকে ফিরে: সকাল আটটার দিকে নুহাশপল্লীর গেট পার হতেই যেন বয়স্ক সবুজ ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো অভিনন্দন জানালো। গণমাধ্যমকর্মী ও আগত দর্শনার্থীরা তখন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের অপেক্ষায়।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) ছিল জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৭তম জন্মদিন। এদিন সকাল থেকেই প্রিয় লেখকের স্মরণে ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটে আসতে থাকেন নুহাশপল্লীতে।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপস্থিত হলেন শাওন। সঙ্গে সঙ্গেই নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুলসহ অন্যান্য কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিছুক্ষণ পরই নুহাশপল্লীর প্রবেশ পথের পাশে উন্মোচন করা হলো হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরাল। এসময় হুমায়ূনপুত্র নিষাদ, নিনিত ও কণ্ঠশিল্পী এস আই টুটুলসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের তোলা ছবির ওপর ভিত্তি করে ম্যুরালটি নির্মাণ করেন স্থপতি হাফিজ উদ্দিন বাবুল।
ম্যুরাল উন্মোচন শেষে ধীর পায়ে সবাই উপস্থিত হলেন লিচু বাগানে। এখানেই লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হুমায়ূন আহমেদ। কবরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ঘাসগুলো যেন জড়িয়ে আছে লেখকের পাঁজর। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে কবর জিয়ারত ও দোয়া করা হলো।
এখানে আগতদের অনেকেই এসেছেন হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু সাজে। হুলুদ শাড়ি পরা বেশ কয়েকজন তরুণীও চোখে পড়লো। প্রিয় লেখকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবাই ঘুরে দেখতে লাগলেন নুহাশপল্লী।
এখানকার স্থাপনা লীলাবতী, মৎস্যকন্যা, বৃষ্টিবিলাস, ভূতবিলাস, লেক, টঙ- কিছুই বাদ পড়লো না। নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করার সুযোগও মিস করছেন না কেউ।
কথা হলো নুহাশপল্লীতে ঘুরতে আসা হুমায়ূনভক্ত শাহী, দিশা, সোহাগ, সাজ্জদাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী দিশা জানালেন, তিনি কোনোদিন হুমায়ূন আহমেদকে সরাসরি দেখেননি। যদি দেখার সুযোগ হতো, তবে তাকে তিনি বলতেন- ‘তুমি সবার মনের কথা বোঝো। ’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা নাজিবুল হক রাসেল বললেন, হুমায়ূন আহমেদ অসাধারণ এক লেখক। তার লেখায় জাদু আছে। অনেকবার নুহাশপল্লীতে আসতে চেয়েছি, আসা হয়নি। এবার পরিবারের সবাই মিলে চলে এসেছি।
নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল ও সহকারী ব্যবস্থাপক মো. পাপন খান জানালেন, বছরের অন্যদিনগুলোতে এখানে প্রবেশ ফি দু’শো টাকা হলেও লেখকের জন্ম-মৃত্যুর মতো বিশেষ দিনগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত এই স্থান।
নুহাশপল্লীর পাশের বাসিন্দা দিনমজুর তারাবানু (৫০) বললেন, ‘আগে এই এলাকা তেমন উন্নত আছিলো না। হুমায়ূন স্যার এইহানে বাড়ি করার পর থিকা এলাকার বহুত উন্নতি হইছে। রাস্তাঘাট পাকা হইছে, কারেন্ট (বিদ্যুৎ) আইছে, বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট হইছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যার খুব ভালো মানুষ আছিলো। কোনো অহংকার আছিলো না। ধনী-গরিব সবার সঙ্গেই সমান ব্যবহার করতেন। আজ স্যার নাই, এলাকায় আর আগের মতো উন্নতি নাই। তিনি থাকলে এই এলাকায় আরও উন্নতি হইতো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
টিআই/আরএইচ
** ‘কিছু কিছু মানুষ আসেন, যান না’
** হুমায়ূন আহমেদ ‘প্রয়াত’ নন
** হুমায়ূনের নামে অবশ্যই ক্যান্সার হাসপাতাল হবে