সচেতনতা ও তথ্যের অভাবে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ জরিপের আত্ততায় আসছে না, আর সে কারণেই তাদের আনা সম্ভব হচ্ছে প্রয়োজনীয় সেবার আওতায়। দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ জরিপ করার পর এমন কথাই শোনা গেলো জরিপকারীদের মুখে।
সদর উপজেলার ৯ বছরের অটিস্টিক শিশু রনি এই জরিপের আওতায় আসেনি। তার মা রনজিনা জানালেন, তারা নাকি মাইকিং শুনতে পাননি।
আবার জরিপের আওতায় এসেও বাদ পড়েছে এমন রয়েছে কেউ কেউ। সদর উপজেলার জয়ন্তি (২৫)’র বাম হাতে জন্মগত সমস্যা। হাতে কোনো শক্তি নেই এবং হাতটি উপরেও তুলতে পারেন না। তার জরিপ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সনাক্তকরণের সময় তাকে অপ্রতিবন্ধী বলে বাদ দেওয়া হয়েছে।
একটি হাত দিয়ে সে কিছুই করতে পারে না, অথচ এর পরেও তাকে কেন বাদ দেওয়া হলো সে উত্তর জানা নেই জয়ন্তির।
তবে সার্বিকভাবে দিনাজপুর জেলায় প্রতিবন্ধী জরিপের ফল ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলেই জানা গেলো।
সম্প্রতি এই জেলায় জরিপে প্রাথমিকভাবে ৩৯,৫৩১ জনের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্যে নারী ১৬,৪৫৬ জন, পুরুষ ২২,৯৯৭ জন ও হিজড়া ৭৯ জন। পরে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এতে এই জেলায় ৩৪,৫৪৯ জনকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা।
দিনাজপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় জানায়, সনাক্ত করার সময় ৫ বছরের নিচের শিশুদের ও বার্ধক্যজনিত কারণে প্রতিবন্ধীতার শিকার এমনদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
কথা হচ্ছিলো সমাজ সেবা কার্যালয়ের পৌর সমাজ কর্মী রৌতন আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, চিকিৎসকদের মতে, যে সব শিশুর বয়স ৫ বছরের নীচে তাদের ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর সে কারণেই তাদের এখনই প্রতিবন্ধী বলা যাবে না।
দিনাজপুর সুইড বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষক শাহনেওয়াজ জানালেন, তাদের স্কুলে ৮৬ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ে আছে তাদের সকলেরই জরিপ ও ডাক্তার কর্তৃক সনাক্তকরণ সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ছেলে ও মেয়ে বাদ পড়েনি।
এদিকে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সমন্বয়কারী শৈলেন চন্দ্র রায় বলেন, তিনি চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলার প্রতিবন্ধীতা জরিপের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। তাই তিনি সকলকে জরিপ ও মেডিক্যালের আত্ততায় নিয়ে আসতে পেরেছেন।
কিন্তু সদর উপজেলার একটি হাত অকেজো হয়ে থাকা জয়ন্তি (২৫) আর অটিস্টিক শিশু রনি (৯) বিষয়ে কথা তুলতে সংশ্লিষ্টরা বললেন সচেতনতার অভাবের কথা।
সচেতনতা ও তথ্যের অভাবে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ জরিপের আত্ততায় আসতে পারেনি, বললেন সম্প্রীতি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মোছাঃ হালিমা খাতুন।
তবে একই সঙ্গে প্রচারনায় দুর্বলতার কথাও বললেন তিনি। হালিমা খাতুন বলেন, এ ব্যাপারে আরও বেশি প্রচার প্রচারণার দরকার ছিল। প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় সব ধরণের প্রতিবন্ধী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সহায়ক যন্ত্র ছিল না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হয়তো এ কারণেই জয়ন্তির মতো প্রতিবন্ধীরা বাদ পড়েছেন।
এদিকে দিনাজপুরে চিকিৎসকদের সনাক্তকরণের পর ডাটা এন্ট্রির কাজ শুরু হয়েছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ডাটা এন্ট্রি হয়েছে ৩০,৮৯৫ জনের। তার মধ্যে সদর উপজেলার ৪৩৩০ জন, বিরল উপজেলার ২৫৫০ জন, পার্বতীপুর উপজেলার ৩৪০৭ জন, বোচাগঞ্জ উপজেলার ১৬০৮ জন, কাহারোল উপজেলার ১১৬৯ জন, খানসামা উপজেলার ১৮৩০ জন, বীরগঞ্জ উপজেলার ৩১২৮ জন, চিরিরবন্দর উপজেলার ২৫৯২ জন, বিরামপুর উপজেলার ২২৮৬ জন, হাকিমপুর উপজেলার ১০৭৪ জন, ঘোড়াঘাট উপজেলার ৯৩৭ জন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ২০৮০ জন, ফুলবাড়ি উপজেলার ২০১২ জন, ইউসিডির ১৯২১ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ০৯৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এমএমকে