ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বহু ফাঁদের দেখা মেলেনি মাছ ধরা উৎসবে!

বেলাল হোসেন ও স্বপন দাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
বহু ফাঁদের দেখা মেলেনি মাছ ধরা উৎসবে! ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোরের মরাবিল থেকে: পলো, ধর্ম, ঠেলা, ফরিয়া, ডরি, উকা, হোফা, হগরা, টাবা, কুছা ও জাল মাছ ধরার ফাঁদ বা উপকরণের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও মাছ ধরার আরো বহু ফাঁদ বা উপকরণ রয়েছে।

কিন্তু পলো, ঠেলা ও ধর্ম জাল ছাড়া অন্য কোনো ফাঁদের দেখা মেলেনি নাটোরের মরাবিলের মাছ ধরার উৎসবে।

তবে অঞ্চল ভেদে মাছ ধরার এসব ফাঁদ বা উপকরণের নামও ভিন্ন। আবার এসব ফাঁদ একেক অঞ্চলের মানুষ একেক কৌশলে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কালের আবর্তে এসব ফাঁদের সিংহভাগ হারিয়ে যাওয়ায় মানুষ এসবের ব্যবহার পদ্ধতিও ভুলতে বসেছেন। সঙ্গে গ্রামবাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছে না  তরুণ সমাজ।

আর এসব ফাঁদ এক সময় হাওর-বাওড়, খাল-বিল, নদীনালা, গাঙ, ছড়া ও পাহাড়ি ঢল বা প্লাবনের পানিতে দেশি প্রজাতির মাছ শিকারের জন্য ব্যবহার হতো। কেবল মৎস্যজীবীরাই নয়, গ্রামের সৌখিন শিকারিরাও সময় বিশেষে মাছ ধরতে এসব ফাঁদ ব্যবহার করতেন।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) নাটোরের মরাবিলে মাছ ধরা উৎসবে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

সাইদুল ইসলাম, মোবারক হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আয়দুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার নয়টি উপজেলা নিয়ে চলনবিল বিস্তৃত। আর এই বিলের ডালপালা হিসেবে সময়ের ব্যবধানে এসব জেলা ও উপজেলায় অসংখ্য বিলের সৃষ্টি হয়েছে। বংশ পরম্পরায় এসব বিলে মাছ ধরার ঐতিহ্য চলে আসছে। এককালে প্রতিটি বাড়িতে মাছ ধরার নানা ধরনের উপকরণ থাকতো। কিন্তু এখন আর আগের সেই অবস্থা নেই।

মাছ শিকারের উৎসগুলো এখন আর আগের মতো নেই। ফলে মাছ ধরার উৎসব উপলক্ষে দূর-দূরান্তের স্বজনদের নিমন্ত্রণ করার প্রথাও প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে বাপ-দাদার সেই রেওয়াজ মেনে এখনও এখানকার বিলে বিলে মাছ ধরার উৎসব চলে। কিন্তু মাছ না নিয়েই অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়।  

ধুলাডাঙা গ্রামের বৃদ্ধ আখের আলী অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, গ্রাম বাংলার ইহিতাস-ঐতিহ্য মাছ ধরার উৎসব কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। নির্বিচারে মা ও ডিমওয়ালা মাছ এবং পোনা নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার কমে গেছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

পাশাপাশি খালবিল, নদীনালা, হাওর-বাওড়, ডোবা-পুকুর ভরাট হচ্ছে। ফসল ও বাড়ি রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। জমির পোকা-মাকড় নিধনের নামে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিষাক্ত পানিতে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে বলেও জানান ওই প্রবীণ।

আখের আলী আরও বলেন, ইদানিংকালে বিলে মাছ ধরতে নামলে শখই কেবল পূরণ হয়। তবে তেমন একটা মাছ মেলে না। আবার মিললেও পুকুরে চাষ করা মাছই পাওয়া যায়। দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫।
এমবিএইচ/এমজেএফ

** মরাবিলে মাছ ধরার উৎসব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।