ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

১৪ ডিসেম্বর: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
১৪ ডিসেম্বর: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় তখন আসন্ন।

১৪ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের প্রথম সারির অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। শকুনের দল এক রাতেই নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালির কয়েকশো মেধাবী সন্তানদের।

স্বজাতে বাঙালি কিন্তু পাকিস্তানিদের দালাল আল-বদরসহ আরও গুটিকয়েক রাজাকারের পোষ্য বাহিনী পাকসেনাদের এ ঘৃণ্যকাজে সহায়তা করে।

আজ সেই ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে এ দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করে আসছে দেশের মানুষ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আসন্ন বিজয়ের বেলায় কাপুরুষ হানাদাররা এদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের ধরে নিয়ে যায়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ড
পাকিস্তানিরা তো বটেই, পিশাচ রাজাকারেরাও টের পেয়ে গিয়েছিলো বাংলার নিশ্চিত বিজয়ের কথা। তাই এদেশের ভবিষ্যতকে নড়বড়ে করে দিতে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির প্রতি তারা বন্ধুক তাক করে। যাকে যেখান থেকে সম্ভব ধরে নিয়ে আসে হানাদার ও রাজাকার বাহিনী। রাতের অন্ধকারে চোখে বেঁধে পাক বাহিনী নিয়ে যায় জাতির গৌরবজ্জ্বল ব্যক্তিদের। বুলেট আর ধাঁরালো অস্ত্র ক্ষতবিক্ষত করে দেয় তাদের।

১৪ ডিসেম্বরের পৈশাচিক বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে স্থবির হয়ে পড়ে সমগ্র বাংলা।

হত্যার পর রাজধানীর মিরপুর, রায়েরবাজার ও বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় হলে মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে প্রিয়জনের মরদেহ খুঁজতে আসেন স্বজনরা। কিন্তু মরদেহগুলো অজস্র গুলি আর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়ায় অনেকের পক্ষেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে ঢাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও সারাদেশে মোট ৯শ ৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করা গেছে।  

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি কতজন বুদ্ধজীবী হারিয়েছে তার কিছু তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী দিবসের জাতীয় সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন নিউজ উইকের তথ্য অনুযায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।

অন্য একটি তথ্যসূত্রে জানা গেছে, দেশ বিজয়ের পর ২০ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র জানায়, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩শ ৬০ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।

আবার ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমির পুণঃমুদ্রিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ২শ ৩২ জন বলা হয়েছে। যদিও এ তালিকা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

পাকিস্তানি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনা ছিলো, বাংলাদেশের বিশ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করার। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক হত্যাকাণ্ড চালাতে ব্যর্থ হন তিনি।

একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়। এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন জহির রায়হান। কমিশনের প্রধান সাংগঠনিক চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানও নিখোঁজ হন ১৯৭২ সালের ৩০ জানুযারি।   

পরবর্তী অস্থায়ী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ফের তদন্ত কমিটি পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ হলেও তা হয়ে ওঠেনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুনির চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, সিরাজুল হক, হুমায়ূন কবীর, গিয়াসউদ্দীন আহমদসহ আরও অনেকে।

ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হবিবুর রহমান, ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউম।
 
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে বাঙালি জাতি হারিয়েছে চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ আরও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, ডা. মনসুর আলী, শহীদুল্লাহ কায়সার, সেলিনা পারভীন, আলতাফ মাহমুদ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রণদাপ্রসাদ সাহা, জহির রায়হান ড. আবুল কালাম আজাদসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এসএমএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।