বর্তমান বিশ্ব ইন্টারনেট আসক্তিতে ভুগছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ব্যবহৃত ডায়গনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডারের পঞ্চম সংস্করণে মানসিক রোগ শ্রেণিবিভাগে ‘ইন্টারনেট আসক্তি’ বলে কোনো আসক্তির কথা উল্লেখ নেই।
তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও ইন্টারনেটকে এখনই ‘আসক্তি’ বলে চিহ্নিত করতে চান না।
তবে, বর্তমানে টিনএজার থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকছে। বাড়ছে ইন্টারনেট নির্ভরশীলতাও।
আপনার ইন্টারনেট আসক্তি আছে কিনা একটু যাচাই করে নিন—
ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কি কখনো আপনার ভেতর অপরাধবোধ তৈরি হয়?
আপনার পরিবারকে সময় দিতে না পারার পেছনে কি ইন্টারনেট কোনোভাবে দায়ী?
ইন্টারনেট ব্যবহার কি আপনার কর্মস্থলে কাজের ব্যাঘাত করছে?
‘ইন্টারনেট’কে ‘মাদক’-এর স্থলে প্রতিস্থাপন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। কারণ উপরের প্রশ্নগুলো ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অন অ্যালকোহলিজম অ্যান্ড ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স’-এর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘মাদক’ বদলে শুধু ইন্টারনেট শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানে।
কারো ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের একটিরও উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বলা যায় তার ইন্টারনেট আসক্তি রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট আসক্তি অনেকটা ফাস্টফুড বা চিনিযুক্ত সফটড্রিংকের মতো। অনেকটা এমন যে, এটা সবখানেই সহজলভ্য। চাইলেই ব্যবহার করা সম্ভব, করাই যায়। তবে সংযমী হয়ে ব্যবহার করা উচিত। কারণ ফাস্টফুড সফট ড্রিংক আর ইন্টারনেট—এসবের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ক্ষতির দিকটাই বেশি।
২০১২ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ সোডাযুক্ত পানীয় বিক্রি সীমাবদ্ধ করার একটি পদক্ষেপ নেন। তার ওই পদক্ষেপ বিশাল বিতর্কের মুখে পড়ে শেষমেষ আদালতে গিয়ে হেরে যায়। কারণ আইন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্করা তাদের পছন্দমতো জীবন-যাপন করতে পারবেন।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির—ইচ্ছে হলে ফ্রেঞ্চফ্রাই বা সফট ড্রিংক খাওয়ায় আইনি কোনো বাধা নেই। ইন্টারনেট গেমে মুখ গুঁজে থাকলেও কেউ নিষেধ করবে না। কিন্তু যখন সেখানে আসক্তির প্রশ্ন, আশঙ্কা সেখানে থেকেই যায়। কারণ ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে প্রমাণিত যে, বর্তমান সময়ে সচেতনতা, স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোয় নেতিবাচক প্রভাবের অন্যতম কারণ এই ইন্টারনেট আসক্তি।
ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার বা পুরোপুরি ইন্টারনেট-নির্ভরতা থেকে তরুণসমাজকে সরিয়ে আনতে কী করা উচিত, এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়ত এখনই কারো কাছে নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থার মতে, বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই ভাবা উচিত।
ইন্টারনেটে আশ্রয় খোঁজা পরবর্তী প্রজন্মের সংখ্যা বেড়ে বর্তমান সময়ের কয়েকগুণ বেশি হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সংকটও হারবাল বা ক্যামিকেল নয়। বরং তা হবে ডিজিটাল আসক্তি।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এসএমএন/টিকে