ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সান্তা ক্লজের আদ্যোপান্ত

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
সান্তা ক্লজের আদ্যোপান্ত

সান্তা ক্লজ! নামটা শুনলেই কল্পনায় আসে তুষার শুভ্র দাড়িগোঁফওয়ালা মোটাসোটা এক বুড়োর ছবি। তাঁর পরনে সাদা কলার-কাফ বিশিষ্ট লাল রঙের পশমি কোট আর ট্রাউজার, মাথায় সাদা রঙের বর্ডার দেয়া লাল রঙের টুপি, কোমরে চামড়ার তৈরি কালো বেল্ট, পায়ে বুট জুতো।

কখনো কখনো চশমাও থাকে বৈ কি! সদা হাসিখুশি এই সান্তা ক্লজ বড়দিনের ঠিক আগের রাতে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাতে বাচ্চাদের বাড়িতে আসে তাদের জন্যে উপহার নিয়ে।

উপরে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সান্তার পোশাকআশাক কিন্তু সবসময় এরকম ছিল না। ১৮২২ সালে ক্লিমেন্ট মুরের লেখা ‘A Visit from St. Nicholas’ কবিতার বর্ণনায় সান্তার যে পোশাক ছিল পরবর্তীতে তাই সবার মনে গেঁথে যায়। এভাবেই এসেছে আজকের সাদা লাইনিঙে লাল পশমি কোটের সান্তা! মুর কিন্তু কবিতাটি লিখেছিলেন শুধু তাঁর পরিবারের আনন্দের জন্যে। পরে ছদ্মনামে এটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে খুব সাড়া পড়ে যায়। তারপর অসংখ্যবার এটি প্রিন্ট করা হয়েছে, তবে ‘The Night Before Christmas’ নামে।

সান্তা ক্লজ কিন্তু সব বাচ্চার জন্যে উপহার নিয়ে আসে না। এজন্যে সে একটা লিস্ট বানায়। লিস্টের একপাশে থাকে দুষ্টু বাচ্চাদের নাম-ঠিকানা, আর অন্য পাশে থাকে শান্তশিষ্ট বাচ্চাদের নাম-ঠিকানা। সমস্ত বিশ্বের শান্তশিষ্ট বাচ্চাদের জন্যে সান্তা চকোলেট, খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার নিয়ে যায় বড়দিনের আগের রাতে। একাজে সান্তাকে সাহায্য করে পরীরা। পরীরাই তাঁর সব উপহার তৈরি করে দেয়। আর্কটিক অঞ্চলের বড় বড় হরিণ টানা স্লেজে করে সান্তা পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। শিশুদের ভীষণ প্রিয় সান্তা ক্লজের বসবাস নর্থ পোলে।

বর্তমানে আমরা যে সান্তা ক্লজকে দেখি, তাঁর জন্ম ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সান্তা ক্লজ আসলে সেন্ট নিকোলাসের আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন। সেন্ট নিকোলাস চতুর্থ দশকের গ্রিক খ্রিস্টান বিশপ। তিনি খ্রিস্টধর্মের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করতে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সান্তা ক্লজ পশ্চিমা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়।

সান্তা ক্লজ আসলে মিথ হলেও শিশুরা বিশ্বাস করে সান্তা সত্যি সত্যি আছে এবং বড়দিনের আগের রাতে সে উপহার নিয়ে আসে। আমেরিকা ও কানাডায় শিশুরা সান্তার জন্যে এক গ্লাস দুধ ও এক প্লেট বিস্কুট আলাদা করে রেখে দেয়। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় সান্তা ক্লজকে দেয়া হয় বিয়ার অথবা মিষ্টি পিঠা। ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনে দেয়া হয় পায়েশ ও দারুচিনি। আয়ারল্যান্ডে সান্তার জন্যে আলাদা করে রাখা হয় ক্রিসমাসের বিশেষ পুডিং ও দুধ।

এসব দেশে সাধারণত বাচ্চারা ক্রিসমাসের আগের দিন বাড়ির সদর দরজায় মোজা ঝুলিয়ে রাখে। ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের অনেক জায়গায় বাচ্চারা ঘরের বাইরে জুতো রেখে দেয়। কথিত আছে, সান্তা ঘরের চিমনী দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে এগুলোতে ক্রিসমাসের উপহার রেখে যায়।

বাচ্চাদের দুষ্টুমি থামানোর জন্যে এই বলে ভয় দেখানো হয় যে দুষ্টু বাচ্চাদের জন্যে সান্তা ক্লজ উপহার নিয়ে আসেন না। এমনকি শোনা যায় চকোলেট ও খেলনার বদলে দুষ্টু বাচ্চাদের ভাগ্যে জোটে পোড়া কয়লা!

অনেকেই বিশ্বাস করে সান্তা জাদু জানে—এমনকি কৌশলে সে সময়কেও থামিয়ে দিতে পারে। কারণ সময় থামিয়ে বা স্লো করে দিতে না জানলে এত অল্প সময়ে সব বাচ্চাদের ঘরে গিয়ে উপহার পৌঁছে দেয়া সম্ভব হতো না সান্তার পক্ষে। কিংবদন্তীতে পরিণত হওয়া সান্তা ক্লজের কাছে সারা বছরই বাচ্চারা নানা রকম ইচ্ছের কথা বলে আকুতি জানায়। সান্তা যেন তাদের ইচ্ছে পূরণ করে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি উপহার হিসেবে দেয় সেজন্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।