ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বর্তমানে দরিদ্র—ভারতের প্রাচীন আট সম্ভ্রান্ত পরিবার

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
বর্তমানে দরিদ্র—ভারতের প্রাচীন আট সম্ভ্রান্ত পরিবার

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভারতের পাঁচশ’রও বেশি অভিজাত পরিবারের পতন ঘটে। তাদের লোক দেখানো আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন নাটকীয়ভাবে ম্লান হয়ে যায়।

অভিজাত মহারাজ-মহারানী, শাসক, নবাব, বেগম ও রাজকুমার-রাজকুমারীরা ক্ষমতাহারা হয়, এবং জমিদার প্রথা বাতিলের কারণে বিপুল পরিমাণ জমিজমাও তাদের আওতামুক্ত হয়ে পড়ে।

এরপরও অভিজাত পরিবারগুলোর অনেকেই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। হয়েছেনও অনেকে। আবার এমনও অনেকে আছেন—অলঙ্কার ও সর্বস্ব বিক্রি করে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় বর্তমানে ভাসমান জীবনযাপন করেছেন। তাদেরই গল্প শুনব আজ।

১. ওসমান আলী খান, হায়দ্রাবাদের শেষ শাসক
বিংশ শতাব্দির শুরুতে তার কাছে স্বর্ণ ও রূপার পরিমাণ ছিল একশ’ মিলিয়ন পাউন্ড। ওসমান আলীর কাছে অলঙ্কারই ছিল চারশ’ মিলিয়ন পাউন্ড পরিমাণ। তিনি পেপারওয়েট হিসেবে একশ’ ৮৫ ক্যারেট হীরা ব্যবহার করতেন যার মূল্য ছিল দুইশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার হারেমের ৮৬ রক্ষিতার মাধ্যমে তিনি একশ’রও বেশি সন্তানের বাবা হন। আর তাই তো ১৯৯০ সালের মধ্যে তার চারশ’ আইনি দাবিদারদের খাতে চলে যায় যাবতীয় ধন-সম্পদ।


২. রাজা ব্রজরাজ ক্ষত্রিয় বীরবার চামুপাতি সিং, তিগিরিয়ার মহাপাত্র
তিনি উড়িষ্যার শেষ জীবিত প্রাক্তন শাসক। একসময় তার ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ছিল। তার প্রাসাদে ছিল ৩০ জন কাজের লোক। শিকারি হিসেবে তার হাকডাক ছিল। ১৩টি বাঘ ও ২৮টি চিতাবাঘ শিকার করেছেন। তবে ভারতের স্বাধীনতার পর তার ভাগ্য বদল হয়ে যায়। আয়কর হারাতে শুরু করেন। বছরে তার ব্যক্তিগত খরচে যা যুক্ত করত একশ’ ৩০ পাউন্ড। ১৯৬০ সালে তিনি নিজের প্রাসাদ নয়শ’ পাউন্ডে বিক্রি করতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে স্ত্রীর সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। ১৯৭৫ সালে সরকার রাজকীয় সুবিধা দেওয়া বাতিল করলে তিনি বার্ষিক আয় হারান। বর্তমানে তিনি গ্রামবাসীর অনুগ্রহে জীবন ধারণ করছেন।


৩. সুলতানা বেগম, বাহাদুর শাহ জাফরের নাতবৌ
১৯৮০ সালে স্বামী প্রিন্স মির্জা বেদার বখত মারা যাবার পর সুলতানার বাকি জীবন কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে। কলকাতার এক ঘিঞ্জি বস্তির দুই কক্ষের একটি বাড়িতে থাকেন তিনি। একটি রান্নাঘর প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে কাজ করেন। আর ধোয়ামোছার সব কাজ সারেন রাস্তার পাশের ট্যাপের পানি দিয়ে। ১৯ শতকের রয়েল পরিবারের এ সদস্যের বর্তমান জীবন চলে মাসিক পেনসন থেকে। ছয় হাজার ইন্ডিয়ান রুপি দিয়ে তিনি তার ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালান।


৪. গোয়ালিয়রের সিন্দিয়া
গোয়ালিয়রের বিশাল দুর্গ বানিয়েছিল মঙ্গলিয়ানরা। মুঘলরা এ দুর্গকে কুখ্যাত কারাগারে রূপান্তর করে। ১৯৫৭ সালে বিদ্রোহীরা এটিকে রণনৈতিক ঘাঁটি বানায় এবং শেষ পর্যন্ত এটি সিন্দিয়ার কেল্লা হয়ে ওঠে। মহারাজা জয়াজিরাও সিন্দিয়া তহবিলের দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর সময় তার ছেলে মাধব রাও ছিল খুব ছোট, তাই তাকে তহবিলের সিক্রেট কোড দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে বছরের পর বছর ধনসম্পদহীনভাবে তীব্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তার পরিবার জীবন অতিবাহিত করেছে। পরে অবশ্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় মাধব তহবিল কক্ষ খুলতে সক্ষম হন ও তাদের আর্থিক অবস্থা ঠিক হয়।


৫. জিয়াউদ্দিন তুসি, বাহাদুর শাহ জাফরের উত্তরাধিকারী, শেষ মুঘল সম্রাট
মুঘল সম্রাটের এ উত্তরাধিকারী বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। তার বিশ্বাস সরকার মুঘল উত্তরাধিকারীদের পাওনা সম্পত্তি হাতে পৌঁছে দেবে। তিনি মুঘল উত্তরাধিকারীদের জন্য একশ’ রুপি করে বৃত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারকে যা সরকার অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউদ্দিন চাচ্ছিলেন এই টাকার পরিমাণ আট হাজার রুপিতে উঠে আসবে ও সরকার আর্থিকভাবে বিমর্ষ মুঘলদের ভালো অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করবে।


৬. উথরাদাম থিরুনাল মার্থান্ডা ভার্মা, প্রাক্তন ত্রিভাঙ্কুরে রাজা
১৭৫০ সালের মধ্যে ত্রিভাঙ্কুরে রাজ্য অনেক বড় ও সম্পদশালী হয়। তাই রাজা একটি স্বতন্ত্র আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক অবদান রাখতে শুরু করেন। ফলে তিনি তার সমস্ত ধন-সম্পদ পদ্মানাভা স্বামী মন্দিরে দিয়ে দেন। পরে ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জেগে উঠলে কঠোর শাস্তি পেতে হয় তাকে এবং ব্রিটিশ বাহিনীকে ক্ষতিপূরণও দিতে হয়। ২০১১ সালের পর পদ্মানাভা স্বামী মন্দিরটি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু রাজা একটি স্টেটমেন্টে বলেন, সম্পদ তার কিংবা সরকারের কারোই নয়, এটি ঈশ্বরের।


৭. টিপু সুলতানের বংশধর
মহীশূরের বাঘ বলে বিখ্যাত টিপু সুলতানের বংশধরেরা এখন বিলুপ্তির পথে। তার ১২ ছেলের মধ্যে সাতজনের পুরষ উত্তরাধিকারী কেউ বেঁচে নেই। বাকি পাঁচজনের মধ্যে কেবল মনিরুদ্দিন ও গোলাম মোহাম্মাদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরা ছোটখাট ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে।


৮. অযোধ্যার রাজকুমারী সাকিনা
কেন্দ্রীয় ভারতের বিশাল অংশ শাসন করতেন তার পরিবার। বর্তমানে রাজকুমারী সাকিনা ও রাজকুমার রিয়াজ মালচা মহলে থাকেন—তুঘলগের যুগে যা শিকারি কুঠি ছিল। এখন বেশ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই শেষে বর্তমানে প্রতিমাসের শেষে তারা পাঁচশ’ রুপি করে পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসএমএন/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।