বগুড়ার চন্ডিহারা থেকে ফিরে: মাঝখানে নয়টি কলার কাঁদি। কাঁদিগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ঘাউড় বলা হয়।
হোসেন আলী ৩ হাজার ২শ’ টাকা দাম চেয়ে বসেন। বেপারি ৩ হাজার টাকা বলে হাঁকাহাঁকি করছিলেন। তবে মালিক নাছোড় বান্দার মতো শুধুই না বলে যাচ্ছিলেন। বেপারিরাও ওপরে উঠতে চাচ্ছিলেন না। প্রায় আধা ঘণ্টার মত এভাবে দামদর চলতে থাকে।
কিন্তু বেপারিরা একাট্টা হয়ে পড়ায় বেকাদায় পড়ে যান কলার মালিক। শেষমেষ তিনি ১শ’ টাকা কমান। তাতেও বেপারিদের সাড়া মেলে না। পরে কি আর করার। হোসেন আলী বেপারিদের দামেই সেই কলা ছেড়ে দেন।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা ১০টায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চন্ডিহারা কলার বাজারে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটির মাঝ বরাবর বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক অতিবাহিত। কাকডাকা সকাল থেকেই বাজারে কলা আসা শুরু হয়। কলার কাঁদিগুলো খাড়া করে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে রাখা হয়। একটু নড়েচড়ে গেলে মুহূর্তে ঠিক করে ফেলা হয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলার কাঁদিতে ভরে ওঠে মহাসড়কের দু’পাশ। সেগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। ক্ষণিকের জন্য সৃষ্টি হয় সবুজের নয়নাভিরাম পরিবেশ। এ যেন কলার মেলা। আর যতক্ষণ এ মেলা চলে ততক্ষণ বেপারিরা কলা কিনতে দলবেঁধে বা এলোমেলোভাবে ঘোরঘুরি করতে থাকেন। এসব কলা কিনে বেপারিরা ভ্যান ও ট্রাকে ভরে নিয়ে যান।
আবুল হোসেন, জিল্লুল, শাফিকুলসহ একাধিক কলাচাষী বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহের শনিবার ও বুধবার এখানে কলার বাজার বসে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বাজার চলে। এই বাজারে শিবগঞ্জ, মহাস্থান, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ, ঢাকুমারা, বালুয়া, রহবলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কলার আমদানি ঘটে।
এখানে অনুপম, চিনি চাম্পা, সাগর, আইটা (স্থানীয় ভাষায়) তরিতরকারিসহ বিভিন্ন জাতের কলা পাওয়া যায়। এরমধ্যে অনুপম প্রতি কাঁদি ৬০০-৭০০টাকা, চিনি চাম্পা ২০০-৩০০টাকা, সাগর ১৫০-২০০টাকা, আইটা ১৫০-২০০টাকা ও তরিতরকারি কলা প্রতি কাঁদি ৩০০-৪০০টাকায় বর্তমানে বেচাকেনা হচ্ছে।
আমজাদ, আব্দুল জলিল, জহুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যাপারি বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে এই বাজারের কলা যায়। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের ব্যাপারিরা এসে এসব কলা কিনে থাকেন। হাটের দিন এখান থেকে ৮-১০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্নপ্রান্তে যায়।
তারা আরো জানান, কলার মূল মৌসুম বাংলা সনের আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস। এসময় এই বাজার থেকে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে প্রতিহাটে কমপক্ষে ৫০-৬০ ট্রাক কলা যায়।
তবে বাজারের যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। কারণ বাজার বসার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ফলে মহাসড়কের দু’পাশ দিয়ে স্থানীয়রা বাজার বসাতে বাধ্য হন। এটা বর্তমান সমস্যা নয়। দীর্ঘকাল থেকে এই সমস্যা চলে আসছে। কিন্তু সমস্যা দূরীকরণে কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই।
বাজারের ইজারাদার আব্দুর রশীদের ভাই আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারটি থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এবছরও বাজারটি প্রায় সাড়ে ৯লাখ টাকা ডাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয় না। বাজারের জন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা হয় না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এমবিএইচ/বিএস/জেডএম