ঢাকা: প্রত্যহ বিকেল ৫টার পর রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট ঘেঁষে বসে মাছের বাজার। এ বাজারে মাছ কিনতে গেলে আলোর ঝলকানিতে ধন্দে পড়ে যেতে হয় ক্রেতাদের।
দেশের অন্য স্থানের চেয়ে অনেকটা আলাদা এ বাজারে ছোট ছোট চৌকিতে করে মাছ নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১৫টি দোকানের এ বাজারে জ্বলে ত্রিশ ওয়াটের চার শতাধিক বাল্ব। এক একটি দোকানে বাল্বের সংখ্যা গোটা ত্রিশের কম নয়।
বিকেল ৫টা থেকে এসব বাল্ব জ্বলতে থাকে রাত ১২টা পর্যন্ত। সে হিসাবে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ইউনিট বিদ্যুৎ।
বিস্ময়ের শেষ এখানেই নয়, এই বাজারের কোনো দোকানেরই বিদ্যুৎ সংযোগের বৈধ কাগজপত্র নেই। নেই বিদ্যুৎ পরিমাপক মিটারও। অবৈধ লাইন টেনে প্রতিমাসে তিন হাজারেরও বেশি ইউনিট খরচ হচ্ছে এ বাজারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রেলগেটের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় বসে এ মাছের বাজার। বাজারটিকে ঘিরে সন্ধ্যার পরই বেশ ভিড় জমে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ বাজার উচ্ছেদ করে। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও বসতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাল্ব প্রতি তাদের কাছ থেকে বিশ টাকা করে নেওয়া হয়। আর গড়ে দোকানপ্রতি নেওয়া হয় পাঁচশ’ টাকা করে। এ টাকা নিতে তাদের কোনো রশিদ দেওয়া হয় না।
তবে কারা নেয় এই টাকা, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি দোকানিরা।
দোকানিদের তথ্যমতে, প্রতি দোকান থেকে পাঁচশ করে বিদ্যুৎ বাবদ চাঁদা ওঠালে তা অংকে দাঁড়ায় প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকারও বেশি। পুরো টাকাটাই যায় বাজার নিয়ন্ত্রক চক্রের পকেটে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, মাছের গায়ের রঙকে ফুটিয়ে তুলতে এবং ক্রেতার কাছে তা আকর্ষণীয় করতে এতো বেশিসংখ্যক বাল্ব জ্বালান তারা।
তবে, বাজারের বিদ্যুতের এ সংযোগ বৈধ কিনা তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, একেতো রাস্তা দখল করা হয়েছে, তার ওপর আবার অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছত্রছায়ায় চলছে এ সংযোগ। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও। বাজারটি বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও তা বারবার বসে যায়।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, অবৈধ সংযোগ টেনে বাজার বসানোর বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এ সংযোগ পেতে শুধু বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় মাস্তানই নয়, থানা পুলিশ ও টহল পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয়। অস্বীকৃতি জানালেই দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ী দাবি করেন, সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিয়ে যান।
তবে, অবৈধ সংযোগ ও ব্যবসায়ীদের এসব দাবির কথা অস্বীকার করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
রাজারবাগ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা ছাইফুল আমিনের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সেখানে তো দু’ সাবমিটার থাকার কথা। যদি অবৈধ সংযোগে বাজার চলে থাকে, তবে বিষয়টি দেখছি এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
এমআইকে/এইচএ/