ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বুকে তাদের তীর বিদ্ধ!

আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
বুকে তাদের তীর বিদ্ধ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেনাপোল (যশোর) : বুকে তীর বিদ্ধ অবস্থায় উড়ছে ৯টি কবুতর। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।

আর পাশেই রক্তের স্রোতে বইয়ের বর্ণমালা মুছে যাচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমার বর্ণমালা তুমি ভালো থেকো। ’

বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ওই স্কুলের কোমলমতি ৯ শিক্ষার্থীর।

২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুজিবনগরে পিকনিক শেষে বাসে বাড়ি ফেরার পথে চৌগাছা সড়কে বাস উল্টে ২৫ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে সেদিনই ৬ জন মারা যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ দিনের মাথায় মারা যায় আরও ৩ শিশু।

অকালে ঝরে যাওয়া শিশুদের স্মরণে বেনাপোল পৌরসভা এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন।

পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বাংলানিউজকে বলেন, হারিয়ে যাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ছিল উড়ন্ত পাখির মতো। এরা একদিন বড় হয়ে দেশের সম্পদ হতে পারতো। সেদিন তাদের বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আঘাত এত গুরুতর ছিল যে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আমি চাই, যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের স্মরণে রাখুক। তাই তাদের নামে এ ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে, শিশুদের মৃত্যুর দু’বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত যেন শোক থামেনি নিহতদের পরিবারে। বিশেষ করে আনন্দ উৎসবের দিন এলে তাদের কথা মনে করে কাঁদে স্বজনরা। আর মৃত্যুবার্ষিকী এলে প্রিয় সন্তানদের ছবি বুকে আকড়ে শোকে নিথর হয়ে পড়েন তারা।

মা রেখা বেগম প্রতিদিন এক বার হলেও ছুটে যান মেয়ে মিথিলার কবরের পাশে। এসময় মেয়ের স্মৃতি স্মরণ করে চোখ জলে ভরে যায়। এখানে দাঁড়ালে তিনি যেন বারবার মেয়ের মুখে মা ডাক শুনতে পান। বললেন, রেখা বেগম।

মিথিলা বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী এবং বাবা-মায়ের বড় আদরের মেয়ে ছিল। শুধু মিথিলার বাবা-মা নয়। ছেলে-মেয়ে হারানো সব পরিবারে অবস্থা একই।

এসব সন্তান হারানো বাবা,মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে নিজের পরিবার ও  দেশ গড়ার দায়িত্ব নেবে। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই তাদের যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে।

বেনাপোল পৌরসভার কাগজপুকুর গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে সুরাইয়া ও জেবা। তারাও সেদিনের বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়। মৃত্যুর আড়াই বছর আগে তারা তাদের মাকে হারিয়েছিল। এরপর থেকে তার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত দুই মেয়ের আশ্রয় হয় বেনাপোলের ছোটআঁচড়া গ্রামে মামা সামাউলের বাড়িতে। সেখানে থেকেই তারা লেখাপড়া করতো।

মামা সামাউল বলেন, তারা খুব আদরের ছিল। যখন আমি আমার সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করতাম, তখন তাদের জন্যও কেনা হত। আজ তারা নেই, তারপরেও অনেক সময় ভুল করে তাদের জন্যও কেনাকাটা করে ফেলি!

নিহত সাব্বিরের বাবা সেকেন্দার একদিকে ছেলে হারানো শোক অন্যদিকে বয়সের ভারে অসুস্থ। পেশায় ফুটপাথের মুড়ি ভাজা বিক্রেতা। আশা নিয়ে ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। এক সময় বড় হয়ে সে পরিবারের হাল ধরবে। এমন ইচ্ছাই ছিল বাবা সেকেন্দারের।

এদিকে, পৌরসভার উদ্যোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনভর নিহত শিশুদের স্মরণে ২য় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের আয়াজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টায় শোক র‌্যালি, সাড়ে ১০ টায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও ১১ টায় দোয়া মাহফিল।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।