ঢাকা: বাসে পাশের সিটে বসা মেয়েটিরে একবার দেখেই ভালো লেগে গেলো! কি সুন্দর করে হেঁটে এলো! হাসিটি কি সুন্দর! কনডাক্টরের সঙ্গে কথা বললো কী অমায়িক ভঙ্গিমায়। আর কণ্ঠস্বর সেতো কতই দারুণ!
এমন মেয়েইতো মনে মনে খুঁজছিলো ছেলেটা।
স্মার্ট ছেলে আলাপ জুড়ে দেওয়া আর এমন কি কঠিন কাজ। কিন্তু আলাপে জানলো মেয়েটি যে কোনও মেয়ে নয়! সে যে রক্ত মাংসের কোনও মানুষও নয়। সে স্রেফ একটি রোবট। তাই বলে ভালো লাগাতো শেষ হয়ে যেতে পারে না। হোক সে রোবট। ভালো যে তাকে বেসেই ফেলেছে। ছেলেটির প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো মেয়েটি। আর প্রথম দেখায়ই প্রেম গড়ালো বিয়েতে। এখন এই রোবট তার অর্ধাঙ্গিনী, রোবটই শয্যাসঙ্গী।
পাঠক কী ভাবছেন? কোনো সায়েন্স ফিকশনের গল্প ফাঁদা হয়েছে। এখন হয়তো গল্প! কিন্তু বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা বলছেন সত্যিই এমনটি ঘটতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে!
প্রশ্ন হলো, মানুষ হিসেবে কেউ কি কোনো রোবটকে বিয়ে করবেন? তাকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেবেন?
কেউ বেছে নেবে কি নেবে না, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। বিষয়টি অনেকটা হাস্যকর ও অবাস্তব মনে হলেও বিজ্ঞানীরা কিন্তু এরকমই একটা পূর্বাভাস দিচ্ছেন।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, আজকাল অনেক দেশেই রোবট অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। কোনো কোনো রেষ্টুরেন্টে ওয়েটার বলতে কোনো মানুষ নেই। যা আছে রোবট। তার কারণ, রোবট দিয়ে অনেক কাজ করানো যায়। সকল নির্দেশ তারা সঠিকভাবে পালন করে। এখন রোবট যদি মানুষের আবেগ বুঝতে পারে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তাহলে সঙ্গী হিসেবে কেন রোবটকে বেছে নেওয়া যাবে না?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন রোবটরা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব দ্রুত ব্যবহার করতে পারবে, তখন কিছু মানুষ তাদের সঙ্গিনী হিসেবেই এই রোবটকেই বেছে নেবে।
একজন শীর্ষ পর্যায়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, রোবটরা যতই মানুষের মতো দেখতে হতে থাকবে, ততই মানুষ তাদের সহচর-সঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে। অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রযুক্তি যেমন মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ছাড়াও রোবট অনেক বেশি বাস্তবসম্মত উপায়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে।
ইউনিভার্সিটি অব আলস্টারের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. কেভিন কুররান এর একটি সম্ভাব্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ক্লাউড কম্পিউটিং’র মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রুপান্তর করা সম্ভব। তাই দিয়ে রোবটকেও অনেক বেশি জীবন্ত বলে মনে হতে পারে।
কেভিন কুররান জানান, যখন এই রোবটগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করবে, যখন তারা রিয়্যাল টাইমে ভাবের বিনিময় করতে পারবে, তখনি তারা সঠিক সহচর হিসেবে কাজ করতে পারবে।
তিনি বিশ্বাস করেন, রোবটরা মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে পারবে, শয্যাসঙ্গীও হতে পারবে। কেবল তাই নয়, কুররানের মতে, রোবটের সঙ্গে ঘর বাঁধতে মানুষ যদি আদালতেরও শরণাপন্ন হয়, তবে মানুষ ওই যুদ্ধে জয়ী হবে এবং যন্ত্রকেই বিয়ে করতে পারবে।
এদিকে, গুগলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বোস্টন ডাইনামিক’ এমন কিছু রোবট বানিয়েছে, যেগুলো মানুষ, কুকুর ও চিতার মতো হাঁটা চলাফেরা করতে পারে। সেই সঙ্গে তারা পারে নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে।
অন্যদিকে, কিছু বিশেষজ্ঞ মানুষের অবিকল রোবট তৈরিতেও গবেষণা করে যাচ্ছেন। ঠিক অনেকটা বিনা-৪৮ নামে রোবটের মতো। তারা রোবটদের মধ্যে আবেগ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। যেন রোবটগুলো মানুষের আবেগ বুঝতে পারে। এর ফলে রোবটরা খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারে।
গুগলের বোস্টন ডাইনামিকের কিছু রোবটের উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছে, সময় এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে রোবটরা অবিকল মানুষের মতো চলা-ফেরা করতে পারে। এমনকি সময় এমন জায়গায় পৌঁছাবে, যখন মানুষেরা রোবটের সঙ্গে শারীরিকভাবেও মিলিত হতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
আরএইচএস/এইচএ/এমএমকে
** ভালোবাসার ছয় রং!