ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিষমুক্ত সবজি

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
বিষমুক্ত সবজি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা: বর্তমানে শাক-সবজি, ফলমূলসহ বেশিরভাগ খাদ্যশস্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। খাদ্যশস্যে মিশ্রিত এসব বিষ স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।

এ ক্ষতি থেকে নিজে বাঁচতে ও ভোক্তাদের বাঁচাতে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের চকবালা গ্রামের চাষিরা।

বিষমুক্ত সবজি চাষে এ গ্রামের কৃষকরা সেক্স ফেরমন পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন। তারা বিষমুক্ত শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। এ বিষয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে স্থানীয় নিবিড় ক্যান্সার, হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন সোসাইটি এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের চকবালা গ্রামে গিয়ে কথা হয় চাষি নুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, বেলী বেগম ও এমদাদুল হকের সঙ্গে। তার বাংলানিউজকে জানান, নিবিড় ক্যান্সার, হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন সোসাইটির উদ্যোগে আমরা বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছি।

বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য আমরা রাসানিক সারের বদলে জৈবসার ও কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্স ফেরমন পদ্ধতি অনুসরণ করছি। এ পদ্ধতিতে ফলন কিছুটা কম হলেও উৎপাদিত সবজি তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয়। তাই এ পদ্ধতিতে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।

নিবিড় ক্যান্সার, হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন সোসাইটির প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ‘ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্য’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করেছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে শাক-সবজি, ফল-মূলসহ সব খাদ্যশস্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব সবজি দীর্ঘদিন তাজা রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ থেকে পরিত্রাণের লক্ষে  ফেরমন পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও  সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য ‘বিষমুক্ত সবজি দোকান’ খেলা হয়েছে। এছাড়া বিক্রি বৃদ্ধির লক্ষে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা অর্ডার সংগ্রহ ও সবজি সরবরাহ করছেন।  

পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সার-কীটনাশক ব্যবহার মানবদেহের জন্য  ক্ষতিকর। এর মধ্যে কিছু কীটনাশক আছে, যা খেতে ব্যবহারের এক সপ্তাহ পর ফল-সবজি তুলতে হয়। দেখা যায়, অনেক চাষি বেশি লাভের আশায় কিংবা অজ্ঞতাবশত কীটনাশক স্প্রে করার পরদিন থেকেই সবজি তুলে বাজারজাত করছেন। এসব খাদ্য মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিষযুক্ত খাদ্যগ্রহণের ফলে আমরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিক ও কিডনিরোগসহ দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।

সেক্স ফেরমন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সেক্স ফেরমন পদ্ধতি মূলত সবজি খেতের মধ্যে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে রাখা বিশেষ পদার্থ। যা গন্ধ সৃষ্টি করে এবং স্ত্রী কীট-পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। তারা বাক্সে রাখা সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়।

ব্যবহার বিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, ৩ শতক জমির ফসল কীট-পতঙ্গ মুক্ত রাখতে একটি ফেরমন ও সাবান পানি মিশ্রিত বাক্সই যথেষ্ট। এভাবে জমি পরিমাপ করে সেক্স ফেরমন-বাক্স বসাতে হবে।

এ পদ্ধতিতে ফলন কিছুটা কম হয়। সে কারণে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এসব বিষমুক্ত সবজি তুলনামূলক কিছুটা বেশি দামে বাজারজাত নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬     
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।