ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাজেদুল নয়ন

বিয়ের বয়স আর হয় না মুর্শিদের!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
বিয়ের বয়স আর হয় না মুর্শিদের! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে: সঙ্গের বন্ধুদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে স্কুলেও যেতে শুরু করেছে অনেকের।

কিন্তু বিয়ের বয়স হয় না মুর্শিদের। গত ১৫ বছরে তার বয়স বেড়েছে ৫ বছর!

শায়েস্তাগঞ্জ মোড়ে নামলে যে পথটি হবিগঞ্জ চলে গেছে, তার প্রশস্ত ডিভাইডারের ওপর মোহাম্মদ মুর্শিদের দুই চাকার বাদামের গাড়ি। শুধু বাদামই নয়, ছোলা, বুট, সিমের বিচি, কুমড়ার বিচিও বিক্রি করেন তিনি। কেরোসিনের কুপির আলো জ্বলছে। ভ্যানের ওপর বড় কড়াইয়ে বালু দিয়ে ভাজা হচ্ছে বাদাম। দ্রুত হাত ঘুরতে থাকে যুবকের। ঠোঙ্গায় ১০ টাকার বাদাম গরম হয়ে আছে।

এতো বাদাম ১০ টাকায়! মুর্শিদ বলেন, ১০ টাকা তো কম না। যতগুলান হয় তাইতু দিবাম।

জীবিকার তাগিদে অভ্যন্তরীন অভিবাসী তিনি। দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে বাদাম বিক্রি করে বেড়িয়েছেন। জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়েছেন ১৫ বছর আগে। বলেন, তখন তো ছুট আছিলাম। ভৈরবই প্রথম ব্যবসা শুরু করি। এরপত্তই (এরপর তো) পটুয়াখালি, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, চিটাগাং সব জায়গাতই যাওন অইছে।

আরো অনেকগুলো জেলার নাম বললেন মুর্শিদ। ঢাকায়ও গিয়েছেন। তবে বাদাম বিক্রি নয়, ঘুরতে। বললেন, ওই শহরো মানুষ বাস করেনি! দিন চার ঘুরেই ঢাকা ছেড়েছিলেন।

তবে দেশের প্রায় সব এলাকায় গেলেও নিজের এলাকায় ব্যবসার ব্যাপারে নেতিবাচক মতামত মুর্শিদের। তার মতে, নিজ এলাকা বাদামের ব্যবসার জন্য মোটেও উপযোগী নয়।

শায়েস্তাগঞ্জ কতদিন ধরে আছেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, এ মোড়ে ব্যবসা করছেন গত আড়াই বছর ধরে।

বৌ-বাচ্চা কই থাকে, জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেন, বিয়াইতো হয় নাই।

বয়স কতো, জানতে চাইলে হেসে উত্তর দেন, জানি না।

মুর্শিদ জানান, বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করলে, সব সময়ই উত্তর আসে, কত হইছে আর তোর বয়স! ২০-২২ হইবো।

গত ১৫ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছেন তিনি। ১৫ বছর অাগে বাবা-মা বলতেন বয়স ১৫। এরপর পনেরতে আটকে ছিলেন অনেক বছর। গত কয়েক বছর ধরে আটকে আছেন, ২০-২২ এ।

বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘোরাঘুরি করলেও এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়নি মুর্শিদের। তাই বয়সও নির্দিষ্ট করা হয়নি।

তিন ভাই-এক বোনের মধ্যে সকলের বড় মুর্শিদ। বললেন, ভাই, ফ্যামিলির বড় হওয়ার বিপদ আছে। ছোট বোইনটারে বিয়া দিছি। এখনও ভাইগুলান ছোট। বাপে কর্ম করতে পারে না। ফ্যামিলি টানতে হয়। তাই বিয়া-শাদি এখনও কপালে নাই।

আয় কেমন, জানতে চাইলে বলেন, এইরম ব্যবসার আর আয় অইবো কেমন! চইলা যায়। খারাপ না।

তবে বিয়ে করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েকেই বিয়ে করবেন। বলেন, তখন ঘরের কাছে ছুডু খাডু দুকান দিয়া বইসা যাইমু।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এমএন/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।