ধামরাই (ঢাকা) থেকে ফিরে: মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
তার এই অবস্থান না জানে বিশ্বের বাঘা গোয়েন্দাদের কেউ। সাড়া জাগানো গোয়েন্দা চরিত্রের কি জেমস বন্ড! কি সিআইএ বা এমআই সিক্সটিনের কোনো এজেন্ট! এমনকি বাংলাদেশেরও কোনো গোয়েন্দা!
জানেন কেবল এক নারী ও তার তার পরিবার! সেই নারীর নাম মানসী মৌ। আদ্যোপান্ত একজন গৃহবধু। স্বামী ও দু‘টি সন্তান নিয়ে দিন কাটে তার। তার আচঁলের ছায়াতেই আপাতত দিন কাটছে মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের!
এই মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট আসলে ছবির মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট! কেবলই ছবি। শুধু পটে আঁকা ছবি।
আকিঁয়ে মানসী মৌ পরম মমতায় বার্নিকাটকে তুলে এনেছেন রঙ তুলির ক্যানভাসে।
ঢাকার ধামরাইয়ের রথখোলার একটি শতবর্ষী পুরনো বাড়িতে অসংখ্য শিল্প কর্মের মাঝে চোখে পড়ে মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের এই প্রতিকৃতি। তৈল চিত্রের এই ছবিটিই যেন পাশের বাড়ির মেয়ের মতোই ‘খুব পরিচিত জনের’ ছবি হয়ে ওঠে হঠাৎ আঁকাবুকির ঘরে উঁকি দেওয়া কোনো দর্শনার্থীর।
তবে ছবির এই মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট যে খুব বেশিদিন এখানে থাকছেন না তাই জানালেন শিল্পী নিজেই।
‘আমার ইচ্ছে, এই সৃষ্টিকর্মটি আমি তুলে দেবো মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের হাতে। তারই জন্মদিনে। এটাই বাঙালি ললনা হিসেবে ভিনদেশি মানুষটির প্রতি আমার ভালোবাসার উপহার’- প্রাণ খোলা হাসি উপহার দিয়ে বেশ সহাস্যেই বাংলানিউজকে জানালেন মানসী মৌ।
এতো মানুষ, প্রকৃতি থাকতে হঠাৎ মার্কিন মুল্লুকের এই নারীর প্রতি এতো আবেগ? আর বার্নিকাট নিজে কি জানেন তার এই প্রতিচ্ছবির কথা?
‘জানবে কোত্থেকে? বলতে পারেন তাকে সারপ্রাইজ দেবো বলেই এই আয়োজন!
বেশ কিছুদিন আগে একটি পার্টিতে দেখা মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে। চেহারাটা বেশ আর্টিস্টিক। কথা বলে মনে হলো খুব মিশুক। মার্জিত আর সরল ব্যবহার। মনে মনে ভক্তই বনে গেলাম। সেখান থেকে ফিরেই শুরু হলো ক্যানভাসে কল্পনার প্রতিফলন ঘটানো। তৈলচিত্রে এই প্রতিকৃতি গড়তে সময় লাগলো ২০ দিন’। বলছিলেন মানসী মৌ।
‘আমি আমেরিকার নিউইয়র্ক,পেনসেলভেনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। স্বদেশে আসা সেই দেশের মানুষ আমার ক্যানভাসের বিষয় হবে তা ভাবিনি কখনো। ‘ যোগ করেন, ছবি আকাঁয় উচ্চ ডিগ্রি নেওয়া মানসী মৌ।
শৈশব থেকেই আকাঁবুকির শখ। ঘরনী হয়েছেন বছর দশেক হলো। মা হয়েছেন ফুটফুটে দু’টি সন্তানের। স্বামী-সংসার সামলিয়ে এক চিলতে সময় পেলে আকঁতে বসেন তিনি। এখন ছবি আকাঁয় তার প্রেরণা স্বামী সুকান্ত বণিক। যিনি সযত্নে লালন করে চলেছেন ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী তামা কাঁশার শিল্প। সেই শিল্পের একজন ভাস্কর হিসেবেই সুকান্ত বণিককে চেনেন সবাই।
মানসী মৌ’য়ের পেইটিং স্টুডিওতে গেলে দেখা যায় অসংখ্য ছবি। কোনোটি জীবন, কোনোটি বর্তমান, কোনোটিবা ধারণ করেছে সময়কে।
এরই মাঝে ‘খুব পরিচিত’ হিসেবেই একটি ছবি যেন নিজস্ব শক্তিতেই টেনে নিয়ে যায় দৃষ্টির সবটুকু। মনের অজান্তে বলে ওঠে, ‘আরে মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট এখানে! এতোটা জীবন্ত হয়ে! যে প্রতিচ্ছবি অপেক্ষায় আসল মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের। ‘
শিল্প বোদ্ধা না হলে ছবির বিষয়বস্তু বোঝা জটিল। তবে অসংখ্য ছবির মাঝে বলতে গেলে ব্যতিক্রম কেবল এই ছবিই। রং তুলির আচঁড়ে যেন জীবন্ত অবয়ব হয়েই নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেলেন বার্নিকাট রূপী ছবির ভিনদেশি এই নারী। যে নারী সাত সমুদ্রের ওপারের। মার্কিন মুলুকের।
এই চিত্রপটই বলে যায় ভৌগোলিক দূরত্বের সীমা ছাড়িয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ আর মেলবন্ধনের জয়গান। যে ভালোবাসা নিমিষেই দূর করে দেয় হাজার মাইলের দূরত্ব। যে শিল্পকর্ম এক নিমিষেই কাছে টেনে আনে একটি জাতি গোষ্ঠী আর শিল্প-সংস্কৃতির মানুষকে ভিন্ন আরেকটি সংস্কৃতিতে।
ধামরাইয়ের প্রাচীন ভবনে সৃষ্টি। তাতে কী! এই শিল্প কর্মটি যে যুক্তরাষ্ট্রের এই নারী কূটনীতিকের জীবনের এক টুকরো স্মৃতি হিসেবেও হৃদয়ের কোনো একটি স্থানে বাংলাদেশের নাম ধারণ করবে। ভিনদেশি কারো হৃদয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোই বা কি কম কথা!
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এইচএ/