ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) থেকে ফিরে: গ্রামের পথে পথে হাঁটেন আর কিছুক্ষণ পর পর উচ্চস্বরে হাক দেন- ‘লাগবে শীল-পাটা কুটানি’।
কারো দরকার হলে বাড়ির কর্তা বা কর্ত্রী তাকে ডেকে বাড়ির আঙ্গিনায় বা বারান্দায় বসিয়ে শীল-পাটা কুটানি বা ধার দেওয়ার কাজে লাগিয়ে দেন।
এ কাজ করেই দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস (৫৭)।
তিন কন্যা সন্তানের জনক তিনি। দুই কন্যার বিয়ে দিয়েছেন, তারা বেশ ভালোই আছেন। এক কন্যা এখনো পড়ালেখায় ব্যস্ত।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি হাতুড়ি ও ছয় ইঞ্চি সমান একটি বাটাল বাজারের ব্যাগে ভরে কুদ্দুস বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, ভূরুঙ্গামারীসহ বিভিন্ন উপজেলার সদর থেকে গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান কুদ্দুস।
বেশ কয়েকটি পাড়া ঘুরে শীল-পাটা কুটানি শেষ করেছেন কুদ্দুস। এমন সময় তার সঙ্গে দেখা হলো ভুরুঙ্গামারীর ভাসানী পাড়ার এক গৃহস্থ বাড়িতে।
ওই বাড়ির বাহির বারান্দায় পিঁড়িতে বসে শীল-পাটা কুটানির কাজ করছেন কুদ্দুস। বাড়িওয়ালির সঙ্গে দর কষাকষি শেষে এক হাত দৈর্ঘ্য ও আধা হাত প্রস্থের পাটা এবং আধা হাত দৈর্ঘ্যের শীল কুটানির জন্য ৩০ টাকা অথবা এক কেজি চাল দর ঠিক করেছেন তিনি।
সারা দিনে ২০ থেকে ২৫টি শীল-পাটা ধার দেওয়া যায় বলে জানান তিনি। তবে বেশির ভাগ দিনে ১০-১২টার বেশি কাজ হয় না। বড় শীল-পাটা ধার দেওয়া ৩০ টাকা আর ছোটগুলোতে ২০ টাকা করে নেন।
এ কাজ করে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার করেন। কপাল ভালো থাকলে এবং বেশি কাজ জুটলে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার কাজ করতে পারেন বলে জানান কুদ্দুস।
এই কাজ ধরার আগে ব্যবসা করতেন। তবে ব্যবসায় সুবিধা না করতে পেরে শীল-পাটা কুটানির কাজ ধরেছেন বলে জানালেন কুদ্দুস।
কুদ্দুস বলেন, ‘কাজ করি ট্যাকা পাই। কাজ না করলে নাই। মন চাইলে কাজ করলাম, নইলে করলাম না। কারো ধার ধারি না ভাই। এইডা আমার স্বাধীন পেশা। ‘
ছোট মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে ও সংসার চালাতে এই কাজই তার প্রধান অবলম্বন। বাকি জীবন এ কাজেই থাকতে চান বলে জানালেন শীল-পাটা কুটানির ফেরিওয়ালা আব্দুল কুদ্দুস।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
টিআই/আরআই