ময়মনসিংহ: সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ আচারের দোকান। শুনে বা দেখেই হয়তো অনেকেই নাক সিঁটকাবেন।
আভিজাত্যের ঘেরাটোপ পেরিয়ে ভ্যানের কাঁচঘরে রাখা হরেক রকমের এ আচারেই রসনা তৃপ্ত করতে ছুটে আসেন অনেকেই।
হুমায়ুনের টক-ঝাল-মিষ্টি মজাদার আচার যেন তাদের মন কেড়েছে। দারিদ্র্যতাকে হটিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বছর পাঁচেক আগে হুমায়ুন নাম লিখিয়েছেন আচার ব্যবসায়ীর খাতায়।
বড়ই, তেঁতুল, পঞ্চরস, চালতা, চাল কুমড়া, মরিচ, লেবু মোরব্বা, পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙ্গাসহ নানা পদের আচারের সমাহার তার দোকানে।
হুমায়ুনের স্বপ্ন একদিন তারও স্থায়ী আচারের দোকান হবে। ব্যবসার পরিসর বাড়বে। আগ্রহ করেই মানুষ হুমায়ুনের আচার খেতে আসেন। তবে স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে রয়েছে অন্তহীন বাঁধা।
সড়ক ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতে হয় বলেই তার যত ভয় এক শ্রেণির নেতাদের নিয়ে। তার ভাষ্যে, দোকানের নামটা দিতে পারতাছি না। দিলেই নেতা নামের ওই লোকজনের টার্গেটে পড়তে অইবো।
প্রায় ৫ বছর আগে সিলেটের সিরাজ মোল্লা নামের একজনের কাছে হরেক পদের আচার তৈরির কলাকৌশল শেখেন হুমায়ুন কবির। ত্রিশোর্ধ্ব এ যুবক সেখানে মজুর হিসেবে শ্রম বিকোতেন।
এরপর ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। ভাবতে থাকেন নিজেই একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান দেওয়ার।
বাড়ি ফিরেই জেলার ফুলপুর উপজেলার ইমতপুর গ্রামে এসে মন দেন আচার ব্যবসায়। ঘুরে ঘুরে বিক্রির জন্য প্রথমেই কিনলেন একটি ভ্যান। তার ওপরে কাঁচ দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন।
নিত্যদিন ১২ থেকে ১৩ পদের আচার তৈরি করেন ক্ষুদে ব্যবসায়ী হুমায়ুন। প্রতি কেজি আচারের দাম আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা।
কিন্তু ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেটে ৫ থেকে ১০ টাকার আচার বিক্রিই হয় বেশি।
প্রতিদিন তার দোকানে বিক্রি হয় ১২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা। উপকরণ সামগ্রী কেনা বাবদ খরচাসহ নিত্য লাভ থাকে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা।
এ আয় দিয়েই চলে মা-বাবাসহ ৪ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল অবধি নগরীর আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলাকায় আচার বিক্রি করেন এ যুবক। এর পরের সময়েই ছড়িয়ে পড়েন নগরীতে।
সড়কে প্রায় সময়েই মাদকসেবীদের অত্যাচারের মুখে পড়ার কথাও জানান অকপটে। তারা মাগনা (ফ্রি) খাইয়া যায়। প্রতিবাদ করলে ভ্যানের গ্লাস ভাইঙ্গা ফেলবো। এ ভয়ে ওদের কিছু বলুনও যায় না। নীরবেই সহ্য করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এমএএএম/জেডএস