শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): গাঢ় নীলাকাশ আর পেঁজাতুলো মেঘ মনে করিয়ে দেয় শরৎ এসে গেছে। আকাশের দিকে তাকালে বিস্তৃত নীলের মাঝে সাদা মেঘের ভেলাগুলো তুলোর মতোই ধরা দেয় বারবার।
পাশের বনে যে কাশের দল শ্বেতশুভ্র হয়ে ফুটে রয়েছে তারাও শারদ-বন্দনায় আজ দারুণভাবে মগ্ন। গুচ্ছ গুচ্ছ দলে ভাগ হয়ে সবাই আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে যেন গাইছে শরতের গান। এমনি করে সম্মিলিতভাবে তাদের ফুটে থাকার অর্থ এ ঋতুর গভীর কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন।
এভাবে শরৎ প্রতি বছর চুপি চুপি না এলে কাশেদের জীবনে পুষ্পবিকাশের কোনো স্বার্থকতাই হয়তো দৃশ্যমান হতো না। প্রকৃতিবাসী এ কথাটি উপলব্ধি করার অবকাশই পেতো না শরৎ আর কাশফুল দু’জনেই দু’জনার বড় কাছাকাছি। অভিন্ন প্রকৃতির অভিন্ন সত্ত্বা খেলা।
আবহমান বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হয়ে প্রতি বছর এই ঋতুতে গ্রাম-গঞ্জ-শহর জনপদের আনাচে-কানাচে ফুটে থাকে কাশ। দূর থেকে ফুলটিকে দেখলেই বুঝে ওঠা যায় এখন চলছে শরৎকাল।
মঙ্গলবারের (২৩ আগস্ট) শেষ বিকেলটি তখন সন্ধ্যার দিকে মিলিয়ে যাচ্ছিল নিজের মতো করে। মোটরবাইক যোগে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার একমাত্র পথটি ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎ চোখে পড়লো শরতের শ্বেতশুভ্র হাসি! সঙ্গে সঙ্গে যাত্রাবিরতি দিয়ে ছুটলাম তাদের হাসিতে মাখামাখি হতে।
কাছে গিয়ে তাদের সবার পরশ পেয়ে মঞ্জুরির মায়ায় ধন্য হলাম। একটি-দু’টি নয়; সহস্র-কোটি। সবাই সম্মিলিত শব্দহীন হাসিতে রাঙিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। পাকা রাস্তার পাশ দিয়ে নীরবে বয়ে যাওয়া ছড়াটি কাশফুলে সৌন্দর্যে নিজেও সুজজ্জিত হয়ে রয়েছে।
মৃদু বাতাসের পরশে কাশের দল বারবার যেন মাথা নেড়েই চলেছে।
উদ্ভিদ ও পাখি বিশেষজ্ঞ সৌরভ মাহমুদ ‘কাশফুল’ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, এটি ঘাসফুলজাতীয় ফুল। এর মঞ্জুরি (ডাটা) অনেক লম্বা হয়। মঞ্জুরির মাথা অনেকগুলো শাখা থাকে। সেই শাখা পূর্ণ হয়ে ফোটে ফুল। ফুলটি ছোট। কিন্তু মঞ্জুরিবদ্ধ হওয়ায় দূর থেকে সহজে আমাদের দৃষ্টি কাড়ে।
এর প্রজাতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কাশ শরৎ ঋতুর ফুল। কাশফুল মূলত দু’ ধরনের রয়েছে। পাহাড়ি কাশ (Revenna Grass) ও চর অঞ্চলের কাশ (Kans Grass)। এর কোনো সুগন্ধ নেই। প্রায় মাসব্যাপী ফুটে থাকে ফুলটি।
বাংলাদেশ সময়:০৮৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৬
বিবিবি/এএ