ঢাকা: ‘আইগ্লাস’ চোখে, খোলা হাতঘড়িতে গভীর মনোযোগে একাধারে কাজ করে চলেছেন মঙ্গল নন্দী। গায়ে গেঞ্জি, মাথায় সাদা চুল।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ঘড়ি মেরামতে পিতা গোপীনাথ নন্দীর কাছে হাতেখড়ি মঙ্গলের। সেই যে শুরু, তার আর শেষ নেই। হয়তো একমাত্র মৃত্যুই থামাতে পারে তাদের এ পথ চলা।
পুরান ঢাকার কোর্ট কাচারীসংলগ্ন অপ্রশস্ত একটি গলি কৈলাশ ঘোষ লেন। এর ছোট একটি খুপরিতে তাদের ঘড়ি মেরামতের দোকান। পিতার প্রতিষ্ঠিত ৭৯ বছরের প্রতিষ্ঠান। বৃটিশ আমলে বাংলা ১৩৪৫ সালে অর্থাৎ ১৯৩৯ খৃস্টাব্দে এখানেই মঙ্গল ও রবির পিতা ঘড়ি মেরামতের দোকান দেন।
প্রথম দিকে এ দোকানের কোনো নাম ছিল না। দোকান প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর বাংলা ১৩৫১ সনে মঙ্গলের জন্মগ্রহণের পর প্রিয় সন্তানের নামে দোকানের নাম দেন মঙ্গল ওয়াচ কোং। পিতার টাঙানো সেই সাইনবোর্ডটি এখনও আছে। মরচে পড়ে গেছে, লেখাগুলো বিবর্ণ। ভালোভাবে লেখা পড়াও যায় না। মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যায় ‘মঙ্গল ওয়াচ কোং, স্থাপিত- বাংলা ১৩৪৫ সন’।
মঙ্গল বাংলানিউজকে জানান, এক সময় রমরমা ব্যবসা ছিল তাদের। দোকানের আয় দিয়েই তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। সংসার চালিয়েছেন। মানুষ হাতে ঘড়ি পরতো। বাসায় বাসায় দেয়াল ঘড়ি থাকতো। কোর্ট কাচারীর সমস্ত ঘড়ি তার দোকানেই মেরামত হতো।
এখন দিন বদলেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে মানুষ হাতঘড়ি পরা ছেড়েছে। চাবি দেওয়া ঘড়ির বদলে ব্যাটারিওয়ালা ঘড়ি এসেছে। এলার্ম দেওয়া টেবিল ঘড়ির এখন আর দরকার হয় না। মোবাইলের ঘড়িই এলার্ম দেয়। বাড়িতে বাড়িতে দেয়াল ঘড়ি টাঙানোর রীতি পাল্টেছে। ঘড়ি সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। এখন একটি নষ্ট হলে তা আর মেরামত না করে ফেলে দিয়ে নতুন ঘড়ি কিনে ফেলে বলেও জানান মঙ্গল নন্দী।
অনেকটা হতাশার সুরে তিনি বলেন, এ বয়সে নতুন কিছু করা সম্ভব নয় বলেই এটা নিয়ে পড়ে আছি। পিতার গড়ে তোলা ‘মঙ্গল ওয়াচ কোং’ নিয়েই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে চাই।
মঙ্গল নন্দীর কোনো ছেলে নাই। তবে রবির এক ছেলে পলাশ নন্দী। পিতামহের প্রতিষ্ঠানে কিংবা এ পেশায় তার কোনো আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাইলে রবি বলেন, আবেগ দিয়ে তো জীবন চলে না। জীবন চালাতে টাকার প্রয়োজন। জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। এ পেশায় তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আসুক তা চায় না তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
এমআই/এমজেএফ/