মেহেরপুর থেকে: সূর্য গোধূলি রঙে রাঙতেই দিগন্তে ধোঁয়াশা। শিশিরসিক্ত হতে শুরু করেছে প্রকৃতি।
‘হিম হিম শীত শীত/শীত বুঝি এলো রে’ –গ্রামে এখন ছড়ার এ দু’টি চরণ তৈরি হয়েছে। কনকনে ঠাণ্ডায় দম যাওয়ার সময় আসেনি এখনও। তবে প্রকৃতির সব আয়োজন জানান দিচ্ছে বিদায় ঘণ্টা বাজছে হেমন্তের, আসছে শীত।
গ্রামের সড়ক ধরে যেতে প্রাকসন্ধ্যায় নাকে এসে লাগছিলো গোয়ালঘরে সাজাল দেওয়া ধোঁয়ার শীতল গন্ধ। গরম আগুন ধোঁয়াকে যেনো পরাস্ত করা শুরু করেছে হিম হাওয়া। খড়ের স্তূপের উপর রাজহাঁসেরা পাখায় মাথা গুঁজে যাপন শুরু করেছে নতুন ঋতু। শীত আসছে...।
‘একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু’ দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া-কে সে যেনো ভুল প্রমাণ করতে লেগেছে উঠে পড়ে। মুক্তোদানার মতো, স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো সবুজ পাতায় শীত হাওয়ায় খেলছে শিশিরবিন্দু। দূরে কৃষক তখন ব্যস্ত নিড়ানি দিতে ফসলখেতে। বিন্দু বিন্দু শিশির মিলে শিশিরবিন্দু হৃদয়ে আনে কাজের ব্যাকুলতা। শীত আসছে...।
মহিষ দু’টির কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপই নেই। রাস্তার পাশের পুকুরে দিব্যি সমস্ত গা ডুবিয়ে শুধু মাথা উঁচিয়ে জাবর কাটায় ব্যস্ত। জানা গেলো শীতকে কীভাবে মাথানত করাতে হয় তা শেখানোই যেনো তাদের কাজ। ভরশীতেও নাকি মোটা চামড়ার মহিষ এ কাজটিই করে। শীত আসছে...।
বকদের এখন মজার সময়। বিলভরা ধান, পানি কমে মাছ চলে এসেছে ঠোঁটের নাগালে। তাই কুয়াশাঘেরা বিলজলে সন্ধ্যার আগেও উদরপূর্তিতে ব্যস্ত। সামনে তাদের কঠিন সময়। গায়ে চর্বি জমিয়ে তৈরি করতে হবে উত্তরসূরি। শীত আসছে...।
হেমন্তের হলুদাভা লাগতে শুরু করেছে পথ-ঘাট-গাছে। সোনালি ধানের কাছ থেকে কিছু রঙ ধার করেছে যেনো! এসেছে প্রকৃতির রুক্ষতাও। শীত আসছে...।
শিমের নীল-সাদা ফুল নিঃশব্দে জলকণার স্পর্শে পেয়েছে নতুন প্রাণ। মাথা উঁচিয়ে আকাশমুখী। মিষ্টি শীতল গন্ধমাখা তাতে। আগমনী বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে প্রস্তুত হও শীতরসে ভাসতে প্রকৃতি। শীত আসছে...।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
এএ/এটি